১৭ আগস্ট, ২০২০ ২১:৩৭

শেবাচিম হাসপাতালে পানি সংকট চরমে, দুর্ভোগে রোগী-স্বজনরা

রাহাত খান, বরিশাল

শেবাচিম হাসপাতালে পানি সংকট চরমে, দুর্ভোগে রোগী-স্বজনরা

পানি সংকটে বেকায়দায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) হাজারো রোগী ও তাদের স্বজনরা। টয়লেট-বাথরুম, গোসল, কাপড় ধোয়া এবং খাওয়ার জন্য পানি পাচ্ছেন না তারা। ১২ ঘণ্টা পর সোমবার দুপুরে কিছু সময়ের জন্য পানি সরবরাহ করা হলেও লবণযুক্ত লালচে পানি হওয়ায় তা ব্যবহার করতে পারছেন না রোগী ও তাদের স্বজনরা। 

হাসপাতালের পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সেলিম তালুকদার বলেন, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সময় স্থাপন করা দুটি টিউবওয়েল থেকে রোগী ও স্বজনদের পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ইদানিং একটি টিউবওয়েল থেকে ঘোলা ও লবণযুক্ত পানি উঠছে। নতুন টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান। 

শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সোমবার ৮২ জন করোনা রোগীসহ ভর্তি ছিল ১১শ’ ৯৬ জন রোগী। প্রতি রোগীর সেবা যত্নে সাথে থাকছেন এক থেকে দুই-তিন জন স্বজন। এছাড়া প্রতি শিফটে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, কর্মচারীরও রয়েছে ৫ শতাধিক। অথচ রোগী, স্বজন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহারযোগ্য পানি সরবরাহ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। গত রবিবার রাত থেকে পুরো হাসপাতালের পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে। পরে সোমবার দুপুরে কিছু সময়ের জন্য পানি সরবরাহ করা হলেও ফের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। 

হাসপাতালের রোগীরা জানান, ররিবার রাতে কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়া পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় বেকায়দায় পড়েন তারা। টয়লেট, বাথরুম, গোসল, কাপড় ধোয়া এবং খাওয়ার পানি নিয়ে সমস্যায় পড়েন তারা। বাধ্য হয়ে বাইরের দূরদূরান্তের টিউবওয়েল থেকে আবার কেউ বোতলজাত পানি কিনে সাময়িক প্রয়োজন মেটালেও সার্বিকভাবে পানি সংকটে পড়েছেন হাজারো রোগী ও তাদের স্বজন এবং হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

তারা জানান, টয়লেট-বাথরুমে পানি ব্যবহার করতে না পেরে অনেকেই পড়েছেন বেকায়দায়। এ কারণে টয়লেট-বাথরুম থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ওয়ার্ডগুলোতে। রোগীদের কাপড় ধোয়া নিয়েও সমস্যায় পড়েছেন তারা। ডাক্তার-নার্স কর্মচারীরাও একইভাবে পড়েছেন চরম বেকায়দায়। 

হাসপাতালে কর্মরত কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক মো. নাজমূল হুদা জানান, রবিবার রাত থেকে পানি সরবরাহ না থাকায় হাজার হাজার রোগী ও তাদের স্বজনরা অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন। সোমবার দুপুরে কিছু সময়ের জন্য পানি সরবরাহ চালু হলেও সরবরাহ করা পানি লালচে নোংরা এবং লবণযুক্ত। ওই পানি খাওয়া এবং ব্যবহার উপযোগী নয়। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। 

শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন পানি সংকটের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, হাসপাতালের অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা ও পানি সরবরাহের দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের। পানি সংকটের কারণ জানতে তাদের ডেকেছিলেন। তারা নানা অজুহাত দেখায়। তারা কেন ব্যাকাপ টিউবওয়েলের ব্যবস্থা রাখেনি। কেন রোগীরা পোকা-ময়লাযুক্ত লালচে পানি ব্যবহার করবে। তারা কেন বরাদ্দ আনতে পারে না বিষয়টি তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। হাসপাতালের পানি সমস্যার দ্রুত সমাধান করার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে নির্দেশ দেয়ার কথা বলেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন। 

গণপূর্ত বিভাগের মেডিকেল উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সেলিম তালুকদার বলেন, হাসপাতাল চত্বরের নার্সিং হোস্টেল ও ডাক্তার কোয়ার্টারে ১৯৬৮ সালে স্থাপিত দুটি টিউবওয়েল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে হাসপাতালের ওভারহেড ট্যাংকিতে রিজার্ভ করা হয়। পরে সেই পানি পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরবরাহ করা হয়। ‘এ’ ব্লকের একটি রিজার্ভ ট্যাংকি পরিবর্তনের কারণে কিছু সময়ের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ ছিল। টিউবওয়েল দুটি পুরনো হওয়ায় লবণযুক্ত ঘোলাটে পানি আসছে বলে স্বীকার করেন তিনি। 

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেরাল্ড অলিভার গুডা বলেন, হাসপাতালের টিউবয়েল দুটি ৬২ বছরের পুরনো। হাসপাতালের পরিচালক পানি সংকটের কথা তাকে জানিয়েছেন। তিনি বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে সার্ভে করে ওই টিউবয়েল সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছেন। একই সাথে হাসপাতালের জন্য নতুন একটি টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য ৬২ লাখ টাকার একটি প্রাক্কলন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। বরাদ্দ বা বরাদ্দের প্রতিশ্রুত পাওয়া গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালে নতুন টিউবয়েল স্থাপনের কথা বলেন গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী। 


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর