বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক তাকবীর ইসলাম খানের হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বাংলাদেশে ছাত্র, যুব, শ্রমিক, প্রবাসী অধিকার পরিষদের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বগুড়া শহরে সাতমাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাকবীর ইসলাম খান হত্যার দায় স্বীকার করে গ্রেফতার আসামি আল আমিন (২৪) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে বগুড়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ শাহরিয়ার তারিকের আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক ওই জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে আল আমিন উল্লেখ করেছেন, ঘটনার দিন সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ নিজেই চাপাতি হাতে তাকবীর ইসলামকে কুপিয়েছেন। কোপানোর পর সেই চাপাতি তাকে (আল আমিন) দেন রউফ।
আদালতে আল আমিনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, আল আমিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আদালতকে জানিয়েছেন, ১১ মার্চ ধুনটে ছাত্রলীগের সমাবেশে যোগদান করতে যাওয়ার পথে তাকবীর ইসলাম খানের মোটরসাইকেলের সঙ্গে আবদুর রউফের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিতন্ডিতা ও বিরোধ হয়। জেলা ছাত্রলীগের নেতারা বিষয়টি তাৎক্ষণিক মীমাংসা করে দেন।
এর জেরে তাকবীর সমাবেশ শেষ হওয়ার আগেই তার সমর্থকদের নিয়ে বগুড়া শহরের সাতমাথায় ফেরেন। এসময় তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আবদুর রউফ বগুড়ায় ফিরে সরকারি আজিজুল হক কলেজের নতুন ভবনের আশপাশের ছাত্রাবাস থেকে ৩০-৩৫ জন সমর্থককে ডেকে নিয়ে সাতমাথায় তাকবীরকে উচিত শিক্ষা দিতে রওনা দেন। রউফসহ কয়েকজনের হাতে ছিল চাপাতি। অন্যদের হাতে ছিল স্টেইনলেস স্টিলের (এসএস) রড।
এর আগে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ভোররাতে বগুড়া সদর থানা-পুলিশ কাহালু উপজেলা থেকে আল আমিনকে গ্রেফতার করে। তার নাম এজাহারে নেই। তবে তাকবীরকে কোপানোর দিন সাতমাথা এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আল আমিনের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়ার সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশ। আল আমিন মামলার প্রধান আসামি আবদুর রউফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। আল আমিন কাহালু উপজেলার সাঁকোহালি গ্রামের আক্কাসী আলীর ছেলে এবং বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।
তাকবীর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৮ মাড়ড়চ) বিকেলে শহরের সাতমাথায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সভা করেছে জেলা ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাসের সভাপতিত্বে সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার রায় প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
তাকবীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত মঙ্গলবার (১৬ মাড়ড়চ) রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফকে বহিষ্কার করা হয়।
উল্লেখ্য, তুচ্ছ ঘটনার জেরে ১১ মার্চ সন্ধ্যায় বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় ছাত্রলীগের একাংশ তাকবীর ইসলামের ওপর হামলা করে। পাঁচ দিন পর গত মঙ্গলবার বিকেলে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তাকবীর।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত