৩ অক্টোবর, ২০২২ ১৭:৩০

বরিশালে আত্মহত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে

প্রতিরোধে নানা পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে আত্মহত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে

প্রতীকী ছবি

বরিশালে আত্মহত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। এদের মধ্যে তরুণ-যুবকদের সংখ্যা বেশি। পারিবারিক কলহ, সীমাহীন প্রত্যাশার ন্যূনতমও পূরণ না হওয়া, বাবা-মায়ের পরকীয়া ও অবৈধ আয়, ডিজিটাল ফাঁদে ফেলা, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, চাকরি না পাওয়াসহ নানা অপ্রাপ্তির কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে তরুণ-যুবকরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আত্মহত্যার প্রবনতা কমাতে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা, শিক্ষা, ধর্মীয় ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উদ্দীপনামূলক প্রচারণা এবং ছোটবেলা থেকে নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মীয় অনুশাসন জোড়ালো করা উচিত বলে মনে করছেন তারা।

বিএমপি’র এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালে বরিশাল মহানগরীতে ১৫১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০২টি বিষপানে এবং ৪৯টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে গলায় ফাঁস দিয়ে। ২০২১ সালে মহানগরীতে আত্মহত্যার ১৯৯টি ঘটনা রেকর্ড হয়েছে বিএমপি’তে। এর মধ্যে ১৩৮টি বিষপানে এবং ৬১টি জন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। 

চলতি বছরের ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মহানগরীর ৪ থানা এলাকায় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৫২টি। এর মধ্যে সর্বাধিক ১৪০টি ঘটনা ঘটেছে কোতয়ালী থানা এলাকায়। বাকি ১২টির মধ্যে বন্দর থানা এলাকায় চারটি, কাউনিয়া থানায় পাঁচটি এবং বিমানবন্দর থানা এলাকায় তিনটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

অর্থাৎ ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৪৫২টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বরিশাল মহানগরীতে। যার মধ্যে ৩৫৬টি বিষপানে এবং বাকি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে গলায় ফাঁদ দিয়ে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ক্রমেই বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও সচেতন নাগরিক কমিটির (নাক) সভাপতি শাহ সাজেদা এ বিষয়ে বলেন, মানুষের সীমাহীন চাহিদার ন্যূনতমও পূরণ না হলে হতাশা সৃষ্টি হয়। তখন পৃথিবী, সমাজ, পরিবার এমনকি নিজের প্রতিও বিন্দুমাত্র মায়া থাকে না। হতাশা থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তরুণ ও যুবকরা। আবার পারিবারিক কলহ, বাবা-মায়ের পরকীয়া ও অবৈধ আয়, উপযুক্ত পাত্র-পাত্রীর সাথে বিয়ে না হওয়া, চাকরি না হওয়া, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও ডিজিটাল ব্ল্যাকমেইলসহ নানা ঘটনায় অসম্মান ও অপমান বোধের কারণে আত্মহত্যা করে অনেকে।

তিনি আরও বলেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা, সন্তানদের গতিপ্রকৃতির উপর অভিভাবকদের নজর রাখা এবং ভুল হলে তাদের শোধরানোর সুযোগ দিতে হবে। এর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি কিংবা শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে তরুণ ও যুবকদের মাঝে উদ্দীপনামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। পারিবারিকভাবেও নৈতিকতা বোধ এবং ধর্মীয় অনুশাসন শিক্ষা দিতে হবে। তাহলেই নতুন প্রজন্ম আত্মহত্যায় নিরুৎসাহিত হবে।

এ বিষয়ে অপরাধ বিশেষজ্ঞ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূঁঞা বলেন, পরিবারে অভিভাবকদের সন্তানদের আরও বেশি সময় দিতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় করতে হবে। তার মতে, প্রতিটি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজার এবং স্টুডেন্ট কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা থাকা উচিত। শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করবেন তারা। তারা শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দেবেন। প্রয়োজনে অভিভাবকদের সাথেও মতবিনিময় করবেন। বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্ক নেই। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈতিকতার উপর জোড় দেয়া হয় না। রাষ্ট্র, সমাজ এবং নাগরিকদেরও এক্ষেত্রে দায় আছে। এসব বিষয়ে নজর দিলে আত্মহত্যার ঘটনা নিশ্চিত কমবে বলে দাবি তার।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, আত্মহত্যাকারীদের বেশিরভাগ বয়সে তরুণ। আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে কাউন্সিলিং নিশ্চিত করতে হবে। কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে জীবনের নানা হতাশা, মাদকতা এবং সহিংসতা থেকে দূরে রাখা সম্ভব। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও এ বিষয়ে পরিকল্পনা করে প্রোগ্রাম সাজাতে পারে। কাউন্সিলিং জোড়দার হলে আত্মহত্যা এবং বিপদগামীতা থেকে নতুন প্রজন্ম বিরত থাকবে বলে তিনি আশা করেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর