১৩ মে, ২০২৩ ১৭:৫৮

আতঙ্কে উপকূলবাসী, বরিশালে নৌযান চলাচল বন্ধ

পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদের দাবি প্রশাসনের

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

আতঙ্কে উপকূলবাসী, বরিশালে নৌযান চলাচল বন্ধ

বরিশালে নৌযান চলাচল বন্ধ

উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। এর প্রভাবে মেঘলা আবহাওয়া এবং থেমে থেমে হালকা বাতাস বইছে বরিশাল অঞ্চলে। ঘূর্ণিঝড় এবং এর প্রভাবে ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচতে মানুষকে সতর্ক করতে মাইকিং করছেন ঘূণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) সদস্যরা। বন্ধ রাখা হয়েছে সব ধরনের নৌযান চলাচল।

জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দুর্যোগকালীন সবাইকে সাইক্লোন শেল্টারে নিরাপদে আশ্রয়ে নিতে অনুরোধ করেছে জেলা প্রশাসন। সব উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিসহ জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক রাখার পাশাপাশি পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী ও ত্রাণ মজুদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঘূণিঝড় মোখা পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাসাতের সর্বেচ্চ গতিবেগ ৭৪ কিলোমিটার। এটি ১৬০ কিলোমিটার গতিতে উপকূল অতিক্রম করতে পারে, যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৭০ থেকে ১৭৫ কিলোমিটার গতিতে প্রবাহিত হতে পারে। এর প্রভাবে কক্সবাজাররে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। ঘূর্নিঝড়টি ১৪ মে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমার অতিক্রম করতে পারে। ঘূণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম ও বরিশাল উপকূলীয় এলাকায় বজ্রসহ ভারী ও অতিভারী বৃষ্টি এবং দ্বীপ, চর ও নিম্নাঞ্চলে ৫ থেকে ৭ ফুট উচু জলোচ্ছ্বাস  হতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ঘূণিঝড় মোখার ধেয়ে আসার খবরে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানলে কাঁচা ঘরবাড়িসহ জানমাল রক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা তাদের মাঝে। বিপদ থেকে রক্ষায় আল্লাহর কৃপা কামনা করছেন তারা।

অপরদিকে বরিশাল নদী বন্দরে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হলেও ঢাকাগামীসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে নিয়মিত রুটের যাত্রীরা পড়েছেন বেকায়দায়। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক আবদুর রাজ্জাক।

আর ঘূর্ণিঝড়কালীন মানুষকে নিরাপদে যেতে মাইকিং করছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)। লাল নিশানা টাঙিয়ে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় এবং এর পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতার জন্য বরিশাল বিভাগে ৩২ হাজার ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তত আছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল অঞ্চল সিপিপি’র উপ-পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন। 

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় গত দুই দিনে জরুরি সভা করেছে জেলা এবং বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে জানমাল রক্ষায় জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিসহ সকল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক রাখা হয়েছে। দুর্যোগের আগেই জনগণকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। 

শনিবার বিকালে সার্কিট হাউজে বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জানানো হয়, বিভাগের ৬ জেলা ও উপজেলা এবং মহানগরে ৩ হাজার ১০১টি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। দুর্যোগকালীন সময়ে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সব উপজেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদের পাশাপাশি উদ্ধারকারী বিভিন্ন সংস্থাকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে বলে জানান বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন-উল আহসান। 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর