বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

পুলিশের পাহারায় তানজিনার পরীক্ষা

পুলিশের পাহারায় তানজিনার পরীক্ষা

অবশেষে স্বামীর ঘর থেকে থানা পুলিশের সহায়তায় প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় অংশ নিলো গাজীপুরের শ্রীপুরের মেধাবী শিক্ষার্থী তানজিনা আক্তার। মাস দুয়েক আগে এই শিশু তানজিনার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী তার পড়াশুনা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তানজিনা নাছোরবান্দা এতোটুকু বয়সে সে বুঝতে পেরেছে শিক্ষার মর্ম। তাইতো স্বামীর বাধা পেরিয়ে পুলিশের সহায়তায় গতকাল বুধবার শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পিএসসি'র প্রথম পরীক্ষায় অংশ নেন তানজিনা।

সে শ্রীপুর পৌঁর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের উজিলাব গ্রামের রঙ মিস্ত্রি তাইজুল ইসলামের একমাত্র কন্যা। তার উপর অত্যাচার ও পড়াশুনায় বাধা দেওয়ায় তার (তানজিনা) স্বামী সোহেল মিয়াকে গতকাল বিকালে ভ্রাম্যমান আদালত ১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।

পরীক্ষা শেষে তানজিনা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানায়,'আমি পড়ালেখা করতে চাই। পড়ালেখা করে অনেক বড় হতে চাই। বাপ-মা ভুল করে আমাকে বাল্যবিয়ে দিয়েছে। এমন যেন আর কোন মেয়ের জীবনে না হয়। তানজিনা আরো বলে, আজকের (বুধবার) গণিত পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বাংলা পরীক্ষার প্রস্তুতি বাড়িতে গিয়ে নিব।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উজিলাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী তানজিনা আক্তারকে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ঢাকার উত্তরাস্থ জসীম উদ্দিন রোডে বাওয়ালী বটতলা এলাকার বিল্লাল কাজীর ছেলে সোহেল মিয়ার (৪০) সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর সোহেল মিয়া  তানজিনার পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। সে পড়াশুনা করতে চাইলে তার উপর নির্যাতন শুরু করে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিতে চাওয়ায় তানজিনাকে তার মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় সোহেল। এ অবস্থায় তানজিনার মা তাসলিমা খাতুন শ্রীপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে শ্রীপুর থানা পুলিশ ঢাকার উত্তরাস্থ সোহেল মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় থানা পুলিশ তানজিনাকে উদ্ধার করে এবং তার স্বামী সোহেল মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

উজিলাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন নাহার জানান, তানজিনা মেধাবী। কিন্তু চুপিসারে প্রতিবেশীদের নিয়ে তানজিনার মা-বাবা তাকে অনেকটা জোর করে বিয়ে দেয়। কয়েকজন শিক্ষক বাধা দিলেও কাজী সলিম উল্লাহ বাধা না মেনে এ বাল্যবিয়ে পড়িয়েছেন।

তবে শ্রীপুর পৌঁর এলাকার ৬নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজষ্টিার সলিম উল্লাহ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,'আমি কোন বাল্যবিয়ে পড়ায়নি।'

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ লাখ টাকার দেনমোহর নির্ধারণ করে তানজিনার বিয়ে নিবন্ধন করেছেন (বালাম নম্বর-খ-১১৩, পৃষ্ঠা-৯৫) উজিলাব গ্রামের নিকাহ রেজষ্টিার সলিম উল্লাহ।

শ্রীপুর পৌঁরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আইনুল হক আকন্দ জানান, বারবার নিষেধ করলেও সলিম উলস্নাহ গোপনে এই বাল্যবিয়ে পড়িয়েছিলেন।

শ্রীপুর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) আমির হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,'অভিযোগ পেয়ে রাতেই তানজিনাকে উদ্ধার করেছি। এখন থেকে তানজিনা তার মা-বাবার সাথে থেকে পরীক্ষা দিবে। তিনি বলেন, তানজিনাকে উদ্ধার করে রাতে থানা পুলিশের হেফাজতে রেখে সকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেই। রাতে তার লেখাপড়ার সকল ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর