বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

জাবিতে ভিসিপন্থিদের মধ্যে সন্দেহের কাদা ছোড়াছুড়ি

সিনেট ও সিন্ডিকেট নির্বাচনে ভরাডুবি

শরিফুল ইসলাম সীমান্ত, জাবি

ঐতিহ্যগতভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। উপাচার্যপন্থি আর উপাচার্যবিরোধী। এখানে সময় আর সুযোগ বুঝে দল বদল করাও শিক্ষক রাজনীতির অনুষঙ্গ। সম্প্রতি এই দলবদলের ঘটনাই আস্থার সংকটে ফেলে দিয়েছে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামকে। গত সোমবার অধ্যক্ষ ক্যাটাগরিতে জাবির একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক মনোনীত সিনেটে ৫টি ও সিন্ডিকেটে ২টি পদের নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকের জোট বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের। সিনেটে ৫টি পদের মধ্যে ৪টিতে নির্বাচিত হয়েছেন উপাচার্যবিরোধী জোট সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ মনোনীত প্রার্থীরা। আর সিন্ডিকেটের ২টি পদের মধ্যে ১টি করে পদে নির্বাচিত হয়েছেন উভয় জোট মনোনীত প্রার্থী।

নির্বাচনের কিছু দিন আগেই উপাচার্যবিরোধী বহু শিক্ষক দল বদল করে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের সঙ্গে ভিড়েছেন। তাই নির্বাচনে উপাচার্যপন্থিরাই জয়ী হবেন এমন ধারণাই ছিল সবার। কিন্তু এমন ভরাডুবির পর উপাচার্যপন্থি শিক্ষক রাজনীতিতে শুরু হয়েছে ‘সন্দেহের কাদা’ ছোড়াছুড়ি।

 উপাচার্যপন্থি অনেক শিক্ষকের দাবি, দল বদল করে উপাচার্যপন্থি বনে যাওয়া শিক্ষকরা তাদের আগের দলের সঙ্গে সখ্য বজায় রেখেছেন। ভোট দিয়েছেন উপাচার্যবিরোধীদেরই।

এমন পরিস্থিতিতে উপাচার্যের আস্থার সংকটে পড়তে পারে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের এই নতুন অংশ। এ অংশের অনেক শিক্ষক আগে উপাচার্যবিরোধী জোট সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় পদে আসীন ছিলেন। এ অংশের প্রধান হলেন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। তিনি সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক ছিলেন। গত এপ্রিলে তিনি উপাচার্যবিরোধী শতাধিক শিক্ষকের বিরাট একটি অংশ নিয়ে উপাচার্যপন্থি শিক্ষক শিবিরে ঢুকেছেন।

এ বিষয়ে উপাচার্যপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার বলেন, ‘আমরা যারা আগে থেকে উপাচার্যের সঙ্গে ছিলাম তাদের এবং নতুন যোগ দেওয়া শিক্ষকদের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি অবশ্যই রয়েছে। এ ঘাটতির কারণেই হয়তো নির্বাচনে আমাদের ভরাডুবি। উপাচার্য এ বিষয়ে এখনই সচেতন না হলে সামনে তাকে আরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে।’

অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার অবশ্য বলেন, ‘যেসব শিক্ষক এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন তারা আসলে নিজেদের দুরবস্থা ঢাকতে চাচ্ছেন। আমাদের মধ্যে বিশ্বাস-যোগ্যতার কোনো ঘাটতি নেই।’

উপাচার্যবিরোধী সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের সদস্য অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব শিক্ষক আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে উপাচার্যের দলে যোগ দিয়েছেন তারা যে উপাচার্যের সঙ্গেও প্রতারণা করবেন না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাদের প্রতারণার ফল উপাচার্য এখন নিজেই প্রত্যক্ষ করছেন।’

এর আগে একাডেমিক কাউন্সিল, সিনেট ও সিন্ডিকেট নির্বাচনের দাবিতে উপাচার্যবিরোধী আওয়ামীপন্থি এই শিক্ষকরা বিএনপি ও বামপন্থি শিক্ষকদের নিয়ে জোটবদ্ধ আন্দোলন করে আসছিলেন। এ জোটের কাছেই এ বছরের জানুয়ারিতে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে হেরে যান উপাচার্যপন্থিরা। বিরোধী পক্ষের শতাধিক শিক্ষককে দলে টানতে পারলেও শেষ পর্যন্ত সিনেট আর সিন্ডিকেট নির্বাচনেও ভরাডুবি এড়াতে পারলেন না উপাচার্য ফারজানা ইসলাম।

প্রসঙ্গত, উপাচার্যবিরোধী জোট থেকে সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক নেহাল আহমেদ (ঢাকা কলেজ)। সিনেটর হয়েছেন অধ্যাপক বেদৌরা বিন্তে হাবীব (নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ), অধ্যাপক মো. ইসমাইল হোসেন (সরকারি তেলিগাতী কলেজ, নেত্রকোনা), অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম (টঙ্গী সরকারি কলেজ, গাজীপুর), অধ্যাপক গোলসান আরা বেগম (আর এস আইডিয়েল কলেজ, কিশোরগঞ্জ)।

অন্যদিকে নির্বাচনে উপাচার্যপন্থিদের ব্যানার থেকে সিন্ডিকেট সদস্য হয়েছেন অধ্যক্ষ শেখ জুলহাস উদ্দীন (সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, ঢাকা), সিনেটর হয়েছেন অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান (আবদুর রউফ কলেজ, মানিকগঞ্জ)।

সর্বশেষ খবর