বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

সবখানেই আওয়ামী লীগ সংগ্রাম বিএনপিতে

জেলার রাজনীতি : গাজীপুর

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

ঢাকার নিকটবর্তী শিল্প অধ্যুষিত এবং ঘনবসতিপূর্ণ জেলা গাজীপুর। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে অনুষ্ঠিত জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও নৌকার জয়-জয়কার। দেশের সর্ববৃহৎ গাজীপুর সিটি করপোশেনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদও আওয়ামী লীগের। এক কথায় গাজীপুর জেলা, মহানগর এবং উপজেলা পর্যায়ে একের পর এক বিএনপির একসময়ের দুর্গ দখলে নিয়ে খোশ মেজাজে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ২০১৭ সালের ২২ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হককে সভাপতি ও গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষিত হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লাহ খানকে সভাপতি ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়। মহানগরের ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে

১৮টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষিত হয়েছে। বাকি ওয়ার্ড ও ৯টি থানা কমিটি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে মহানগর আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন। গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি বলেন, প্রতি মাসের শেষ শনিবার জেলা কমিটির সভা দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলার সব উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন সম্পন্ন হবে। কালীগঞ্জ ও কাপাসিয়া উপজেলায় গ্রাম এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠিত হয়েছে। কালিয়াকৈর উপজেলায়ও গ্রাম এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠন কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই গাজীপুর সদর উপজেলায় গ্রাম এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হবে। সরকারের উন্নয়নের বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে গাজীপুরে উঠান বৈঠকের রূপকার মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ আরও বলেন, কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ এবং শ্রীপুর উপজেলা কমিটি এখনো গঠিত হয়নি। তবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব উপজেলায় কমিটি গঠিত হবে। গাজীপুর সদর উপজেলা এবং কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়েছে।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লাহ খান বলেন, মহানগরের ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১-১৮ ওয়ার্ড পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়েছে। বাকি ওয়ার্ড এবং ৯টি থানা কমিটি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পরপরই গঠন করা হবে।

অন্যদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জেলা, মহানগর এবং উপজেলা পর্যায়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের একাট্টা রাখতে ব্যস্ত সময় পার করছে বিএনপির জেলা এবং মহানগর পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা। ২০১১ সালের ২২ জুন ফজলুল হক মিলনকে সভাপতি ও কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুলকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট হাসান উদ্দিন সরকারকে আহ্বায়ক ও মো. সোহরাব উদ্দিনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষিত হয়। পরে হাসান উদ্দিন সরকারকে সভাপতি ও মো. সোহরাব উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৭৭ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়। তবে গাজীপুর জেলা, উপজেলা, পৌর এবং গ্রাম পর্যায়ে বিএনপির নতুন কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। এদিকে ২০১৩ ও ২০১৪ সালের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে দায়ের করা হয়েছে বহু মামলা। অনেকে জেল খেটেছেন। একেকজনের বিরুদ্ধে ২০ থেকে ৩০টি মামলাও রয়েছে। তাই নেতা-কর্মীরা দলীয় কর্মকাে  অংশ নিতে অনীহা দেখান।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ত্যাগী এবং পরিশ্রমীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। মহানগর বিএনপি শক্তিশালী এবং দলীয় সব কর্মসূচি সফলভাবে পালন করছে।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন জানান, শিগগিরই গাজীপুরে বিএনপির কনভেনিং কমিটি গঠিন করা হবে। কেন্দ্র থেকে মানিকগঞ্জ, নরসিংদী এবং গাজীপুরে কনভেনিং কমিটির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মানিকগঞ্জে কমিটি গঠিত হয়েছে। নরসিংদীতেও কমিটি গঠন কার্যক্রম চলমান। তবে তিনি কারাগারে থাকার কারণে গাজীপুরে কনভেনিং কমিটি গঠিত হয়নি। কনভেনিং কমিটি গঠনের পূর্বে গাজীপুরে উপজেলা, পৌর এবং গ্রাম পর্যায়ে অন্য কোনো কমিটি হবে না। পুরনো কমিটি দিয়েই চলবে দলীয় কার্যক্রম। কনভেনিং কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ত্যাগী, পরিশ্রমী এবং যারা সৎ তাদের মূল্যায়ন করা হবে।

অপরদিকে, ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল মো. আজম খানকে সভাপতি ও মোতাহার হোসেন মানিককে সাধারণ সম্পাদক করে ১১১ সদস্য বিশিষ্ট গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির কমিটি ঘোষিত হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুস সাত্তার মিয়াকে সভাপতি ও জয়নাল আবেদীনকে সাধারণ সম্পাদক করে গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির কমিটি গঠিত হয়।

জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. আজম খান বলেন, ‘গাজীপুরে জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী। আগামী জানুয়ারিতে সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্বের হাতে জেলার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে চান তিনি।’

মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদীন জানান, দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার নির্দেশনা অনুযায়ী মহানগরীতে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম চলছে।

এদিকে আবুল হাসেম খানকে আমির ও অধ্যক্ষ মাওলানা এস এম ছানাউল্লাহকে সেক্রেটারি করে গাজীপুর জেলা জামায়াতের কমিটির মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হয়েছে। তারপর নতুন করে জেলা কমিটি গঠিত হয়নি। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ মাওলানা এস এম ছানাউল্লাহকে আমির ও খাইরুল হাসানকে সেক্রেটারি করে মহানগর জামায়াতের কমিটি গঠিত হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের কয়েজন রোকন (নেতা) জানান, জেলা এবং মহানগরে দলীয় কোনো কার্যক্রম নেই। নতুন করে কবে কমিটি গঠিত হবে তারা তা জানেন না।

এ ছাড়া গাজীপুর জেলা ও মহানগরে জাসদ, বাসদ, সিপিবি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি কেন্দ্রীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর