রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ সংগঠিত বিএনপিতে স্থবিরতা

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

আওয়ামী লীগ সংগঠিত বিএনপিতে স্থবিরতা

ফরিদপুর জেলার রাজনৈতিক কর্মকা- নিয়ে দুই মেরুতে অবস্থান করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে মাঝেমধ্যে নানা অনুষ্ঠান হলেও বিএনপির কোনো কর্মকা- নেই দীর্ঘদিন ধরে। আর জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, বাম সংগঠনগুলোর কমিটি থাকলেও তাদের কোনো কর্মকা- নেই। এক সময় ফরিদপুর জেলায় বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকা- তেমন একটা নেই। একদিকে দলীয় কর্মকা- না থাকা, অন্যদিকে কোন্দলের কারণে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন। নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল চরম আকার ধারণ করায় একাধিক গ্রুপের সৃষ্টি হয়। ফলে বিভিন্ন সময় দলীয় কর্মসূচি কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পালন করতে দেখা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে দলের সম্মেলন না হওয়ায় অনেকেই ক্ষোভে-দুঃখে রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নেই কোনো সম্মেলন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু শীর্ষ দুই পদ নিয়ে বিবদমান দুই পক্ষের সংঘর্ষের কারণে সে সময় সম্মেলনটি প- হয়ে যায়। পরে ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা জহিরুল হক      শাহাজাদা মিয়াকে সভাপতি, সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছাকে সাধারণ সম্পাদক ও রশিদুল ইসলাম লিটনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠন করে দেন। যদিও সেই কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আগের কমিটিতে একই পদে ছিলেন। কেবল সাংগঠনিক সম্পাদকের পদটিতে নতুন মুখ দেখা যায়। পরে ১০ জন উপদেষ্টাসহ ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে ত্যাগী নেতারা স্থান না পাওয়ায় ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলেন পদবঞ্চিতরা। বর্তমানে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অন্তত ৩০ জন নেতা যোগ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। অনেকেই যোগদানের পাইপ লাইনে রয়েছেন। আর দলের বড় একটি অংশ সুবিধা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সখ্য বজায় রেখে রাজনীতি করছেন। এ ছাড়া বর্তমান কমিটির এক ডজন নেতা মারা গেছেন। কেউ কেউ বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় নন। অনেকেই মামলা-হামলার কারণে ফরিদপুর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। ফরিদপুর জেলা বিএনপির একাধিক নেতা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, দলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার কারণে বিএনপির এখন বেহাল দশা। দলীয় কোন্দল তীব্র থাকায় অনেকেই রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অভিযোগ করে বিএনপির বর্তমান কমিটির প্রভাবশালী এক নেতা জানান, বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেক নেতা-কর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সেই সব নির্যাতিত নেতা-কর্মী এবং তাদের পরিবারের কোনো খোঁজ রাখেননি দলের      সিনিয়র নেতারা। ফলে অনেকেই ক্ষোভে রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কেউ কেউ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় দল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন বিএনপির ত্যাগী ও সিনিয়র নেতারা। জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল বলেন, দলের যারা ত্যাগী নেতা-কর্মী, তাদের কোনো মূল্যায়ন নেই। জেলা বিএনপির সভাপতি জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া বলেন, ‘আমরা সম্মেলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জেলে থাকার কারণে সে উদ্যোগ এখন বন্ধ রাখা হয়েছে।’

দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপিকে রাজপথে দেখা না গেলেও ভিন্ন চিত্র ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। একসময় দলের অবস্থা নাজুক থাকলেও এখন দলটি সুসংগঠিত। ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের এমপি, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ বেশ শক্তিশালী। একসময় দলীয় কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দিশাহারা অবস্থানে থাকলেও এখন সেই অবস্থান আর নেই। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি থাকায় ফরিদপুর সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফরিদপুর সদরে এবং জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন্দল কিংবা দ্বন্দ্ব না থাকলেও বোয়ালমারী, সদরপুর, ভাঙ্গা, আলফাডাঙ্গা, চরভদ্রাসন, নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায় আওয়ামী লীগে ব্যাপক কোন্দল রয়েছে। উপজেলা কমিটিতে কোন্দল থাকার কারণে উপজেলা ও ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বেশির ভাগেরই ভরাডুবি হয়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বোয়ালমারী যুবলীগ আয়োজিত সম্মেলন স্থগিত হয়ে গেছে। ভাঙ্গা উপজেলায় কোন্দল চরম আকার ধারণ করায় সেখানে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করে নতুন দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও সেই বহিষ্কার কেন্দ্র থেকে কার্যকর করা হয়নি। ফলে ভাঙ্গা উপজেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দুই গ্রুপের দুজন নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকেন। যদিও কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা কাজী জাফরউল্যাহ সমর্থিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়ে থাকেন। একই অবস্থা নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগে। এখানে সভাপতি হিসেবে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে আয়মন আকবর বাবলু চৌধুরী থাকলেও তিনি এখন এলাকাছাড়া। তার অবর্তমানে সাজেদা চৌধুরীর আরেক ছেলে শাহদাব আকবর লাবু   চৌধুরী আওয়ামী লীগের কর্মকা- পরিচালনা করছেন। সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে কয়েক বছর আগে বহিষ্কার করা হয়।

সেখানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি কিছুদিন সেই দায়িত্ব পালন করেন।  দেলোয়ার হোসেনই সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।  জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দিকনির্দেশনায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সুসংগঠিত। ফরিদপুরে জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জামায়াতে ইসলামী, জাকের পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কমিটি থাকলেও তেমন কোনো কার্যক্রম নেই।

সর্বশেষ খবর