শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ছুটির দিনে বাণিজ্য মেলায় জনস্রোত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছুটির দিনে বাণিজ্য মেলায় জনস্রোত

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কেনাকাটা। সঙ্গে একটু বাড়তি বিনোদন। এ দুইয়ের জন্য আসা ক্রেতা-দর্শনাথীর জনস্রোত দেখা যায় গতকালের বাণিজ্য মেলায়। মানুষের জনস্রোতে জমজমাট হয়ে ওঠে বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ। মেলা ঘিরে দর্শনার্থীদের পদচারণায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের আশপাশের এলাকাও লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। ফলে দিনভর কেনা আর বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন সবাই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি আয়োজিত মাসব্যাপী ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাÑ ডিআইটিএফ ২০২০- দিনভর এই চিত্রই ফুটে উঠছে। গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায় হাজার হাজার ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়। বিপুল জনসমাগমে খুশি বিক্রেতারাও। ছুটির দিন বাবা-মার সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে শিশুরাও মেতে ওঠে আনন্দে। ঘুরে বেড়ানো, কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া আর অস্থায়ী শিশু পার্কগুলোর বিভিন্ন রাইডে উঠে খুশি তারা। সকালে ঘড়ির কাঁটা ১০টা ছোঁয়ার আগে থেকেই টিকিট কাউন্টারের সামনে দেখা যায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর দীর্ঘ লাইন। পরে মূল ফটক উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরপরই দীর্ঘ সারিতে মেলায় প্রবেশ করেন তারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা। দুপুর ১২টার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মেলা প্রাঙ্গণ। পুরো মেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেওয়া মূল্য ছাড় বা বিভিন্ন রকম অফার লুফে নিতে প্যাভেলিয়ন ও স্টলগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে বিক্রেতাদের। গতকাল পরিবারের সবাইকে নিয়ে মেলায় আসা তুলি রহমান আলাপকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যানজট আর কর্মব্যস্ততার কারণে অন্যদিন মেলায় আসা হয় না।

ছুটির দিন হওয়ায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে মেলায় এসেছি। কেনাকাটার পাশাপাশি একটু ঘোরাঘুরি করেছি। জম্পেস আড্ডায় দিনটি ভালোই গেছে।

মূল্য ছাড় ও উপহারের সমাহার : এবার বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন স্টলে নানা রকম উপহার ও মূল্য ছাড়ে পণ্য বিক্রি চলছে। ৪০৫ টাকা মূল্যের বসুন্ধরা নুডলস পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩২০ টাকায়। তা বাদেও এ প্যাকেজের সঙ্গে পাওয়া যাবে ৩টি গিফট। এর মধ্যে আছে একটি ঝুড়ি, একটি টিফিন বক্স আর একটি বাটি। সব মিলিয়ে খাদ্যপণ্যে ধামাকা অফার দিয়েছে বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি মেলায় ক্রেতাদের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে হাজির হয়েছে। এতে ক্রেতারাও সাড়া দিয়েছেন। বসুন্ধরার গুণগত মানের পণ্য কিনতে স্টলে ভিড় করেছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। স্টলে বসুন্ধরার তেল, সেমাই, আটা, ময়দা, সুজি, নুডলস, টিস্যু, পাস্তা, রুটি ও কয়েলসহ নানা পণ্য নিয়ে ক্রেতাদের জন্য সাজানো হয়েছে আকর্ষণীয় প্যাকেজ। এক সঙ্গে প্যাকেজ কিনলে প্যাকেজ ভেদে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় হবে ক্রেতার। তেল, আটা ও ময়দাসহ প্যাকেজ কম্বো সাজানো হয়েছে। এসব পণ্যের বাজারমূল্য ৩৯৬ টাকা, কিন্তু বাণিজ্য মেলায় ৩২০ টাকায় এসব পণ্য কিনতে পারবেন গ্রাহকরা। এর সঙ্গে উপহার হিসেবে থাকছে বাটি, ঝুড়ি ও টিফিন বক্স।

মেলায় পণ্য সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে রিংগো লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির স্টলে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী অন্তরা বেগম আলাপকালে বলেনÑ এখান থেকে কিছু গৃহ পণ্য কিনেছি। এর মধ্যে রয়েছে রিংগো রুটি মেকার। মূলত দাম কম ও মূল্যছাড় পাওয়াতে পণ্যগুলো কিনেছি। এ প্রসঙ্গে রিংগো লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন- এবার আমরা ৫টি স্টলে পণ্য সামগ্রী বিক্রি করছি। ক্রেতাদের ভালো সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে ৬৫০ টাকার গিফট হ্যাম্পার রয়েছে। এর সঙ্গে আরও আছে ১ হাজার টাকার বিশেষ মূল্য ছাড়।

মিনিস্টার ফ্রিজ কিনলে দেওয়া হচ্ছে হরেক রকম উপহার, এর সঙ্গে থাকছে ভ্রমণ টিকিট। ওয়ালটন ইলেকট্রনিক্স পণ্য কিনলেও পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন মাত্রার ছাড় ও উপহার। মোবাইল কোম্পানি স্যামস্যাং ছাড়ের পাশাপাশি ইন্টারনেট অফারও দিচ্ছে।

কাশ্মীরি আচার দিচ্ছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। বিকাশ অ্যাপে কেনাকাটায় ছাড় মিলছে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। অন্যদিকে গৃহস্থালি পণ্যের বিভিন্ন স্টলে দেওয়া হচ্ছে ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। ননস্টিক কড়াইসহ রান্নার নানা উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৩০ টাকায়।  ব্লেজারেও ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে অনেক স্টলে।

বিক্রি বাড়ছে : মেলায় প্রথম কয়েক দিন বিক্রিতে খরা গেলেও এখন ক্রমেই বিক্রি বাড়ছে। সপ্তাহের অন্যদিন সকাল বেলার দিকে তেমন একটা বিক্রিবাট্টা না হলেও দুপুরের পর থেকেই বিক্রি বেড়ে যায়। আর ছুটির দিন তো সকাল থেকেই শুরু হচ্ছে বিক্রি। এখন পর্যন্ত ক্রোকারিজ পণ্যই বিক্রিতে শীর্ষে আছে বলে জানান বিক্রেতারা। এরপরই রয়েছে প্লাস্টিক সামগ্রী, পোশাক ও প্রসাধন। এসব স্টলে সবসময় ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় লেগেই আছে। এ ছাড়া বিক্রি বেড়েছে খাদ্যপণ্যের। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কর্মীরা জানিয়েছেন- মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন সামগ্রীতে রয়েছে বিশেষ ছাড়। স্টলগুলোতে গ্রাহকরা আসছেন, তারা পণ্য দেখছেন এবং অনেকেই তাদের পছন্দ মতো পণ্য কিনছেন।

শিশুর বিনোদন ‘শিশু পার্ক’ : মেলায় আসা শিশুরাও আনন্দে কাটিয়েছে দিনভর। কেনাকাটার চেয়ে মেলার দুই পাশে বসানো অস্থায়ী দুটি শিশু পার্কই তাদের বেশি আগ্রহের জায়গা। জাম্পিং, হানিসিং, মিনিট্রেন, মিনি হেলিকপ্টারসহ দুটি পার্কে ১০টি করে মোট ২০টি রাইড আছে। সেগুলোতে মনের আনন্দে হেসেখেলে বেড়াচ্ছে শিশুরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর