মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

নগরীর বিপন্ন প্রাণীদের প্রতি চার তরুণীর ভালোবাসা

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্তির প্রাথমিক উপায় হিসেবে দেশজুড়ে চলছে সরকারি ছুটি ও নিরাপত্তার জন্য সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। নগর-বন্দর থেকে গ্রাম-গঞ্জে মানুষ এখন পারতপক্ষে ঘর থেকে বেরোচ্ছেন না। অনেকে স্বেচ্ছায় হয়েছেন গৃহবন্দী। কিন্তু নগরীর অলিগলি ও রাস্তার কুকুর-বিড়ালসহ নানা ধরনের প্রাণী টানা এ বন্ধে পড়েছে খাদ্য সংকটে। নগরের বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, দোকানপাট বন্ধের কারণে জুটছে না তাদের প্রয়োজনীয় আহার। নগরের অধিকাংশ বাসাবাড়ির গেটও এখন তালাবদ্ধ। রাস্তার এসব বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়াল এখন খাদ্যহীন হয়ে পড়েছে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অ্যানিমেল কেয়ার অব চট্টগ্রাম’-এর কলেজপড়ুয়া চার সদস্য এখন নগরের অবহেলিত খাদ্য সংকটে পড়া কুকুর-বিড়ালের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অ্যানিমেল কেয়ার অব চট্টগ্রাম জানায়, নগরের দেওয়ানহাট থেকে টাইগারপাস এলাকায় কুকুর আছে ২০ থেকে ২৫টি। ওয়াসার মোড়  থেকে এম এম আলী রোড হয়ে গোলপাহাড় মোড় পর্যন্ত কুকুর আছে ১৫-১৭টি। পশ্চিম নাসিরাবাদের রহমান নগরে আছে ১০-১২টি, আগ্রাবাদের বিশ্বকলোনিতে আছে ২০টিরও বেশি এবং হাজীপাড়ায় কুকুর আছে ১৫-২০টি, বিড়াল আছে ৫-৭টি। রাহাত্তারপুল এলাকায় আছে ৩০টি কুকুর এবং ১৫-২০টি বিড়াল, কালামিয়া বাজার এলাকায় কুকুর আছে প্রায় ৪০টি এবং বিড়াল আছে ১০টি। পাঁচলাইশ এলাকার পার্কভিউ হাসপাতালের পাশে আছে ৪টি কুকুর, বালুচরা আবাসিক এলাকায় আছে ১০-১৫টি কুকুর এবং বিড়াল আছে ৮-৯টি। জিইসি ওআর নিজাম রোডে আছে ৯-১০টি কুকুর এবং বিড়াল আছে ৫টি। খুলশী থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত আছে প্রায় ৫০টি। চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার পর্যন্ত রাস্তায় কুকুর আছে ৪৮টি এবং বিড়াল ২১টি।

 কাজীর দেউড়ি এলাকায় আছে ১৫টি কুকুর। আন্দরকিল্লার ফরহাদাবাগে আছে ১০-১২টি কুকুর। অন্যদিকে হালিশহরে রয়েছে ৫০টিরও বেশি। সংগঠনটির মডারেটর উষা আচার্য্য বলেন, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি দুরবস্থায় আছে বেওয়ারিশ পশু কিংবা পাখিগুলো। কারণ অনেক মানুষ খাবার মজুদ করে রেখেছে। আর যারা খেটে খাওয়া মানুষ তারা সরকার বা অন্য কোনোভাবে কারও না কারও সাহায্য পাচ্ছে বা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু মরবে এ নিরীহ প্রাণীগুলো। কারণ ডাস্টবিনেও তারা এখন খাবার পাচ্ছে না।

ফেসবুকভিত্তিক ‘অ্যানিমেল কেয়ার অব চট্টগ্রাম’-এর মডারেটর উষা বলেন, ‘এ উদ্যোগে আমিসহ আরও তিন মডারেটর আছেন। তারা হলেন তিশা ভট্টাচার্য, ইয়ানা হক ও সুমী বিশ্বাস। আমরা চারজনই মূলত সবকিছু দেখভাল করছি। এ ছাড়া আমাদের কিছু স্বেচ্ছাসেবক দরকার। সেই কারণে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছি। জানা গেছে, গতকাল থেকেই এই চার তরুণী নগরের অবহেলিত ও খাদ্য সংকটে থাকা কুকুর-বিড়ালদের নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। কাজটি তারা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় শুরু করেছেন। নিজেরা রান্নাবান্নার সরঞ্জাম, গাড়ি ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছেন। চাল-ডাল সংগ্রহ করে এসব প্রাণীর জন্য খাবার তৈরি করে ৫-৬ জন স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে প্রত্যেক স্পটে খাবার পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিন তারা ৩০০ প্রাণীর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে।  পাশাপাশি সুবিধা মতো জায়গায় মুড়ি ও বিস্কুট ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে পাখিরাও খেতে পারে। অপর মডারেটর ইয়ানা হক বলেন, অন্তত এ দুর্যোগের সময় এই খাবারগুলো খেয়ে পশু-পাখিগুলো বাঁচতে পারবে। তারাই যদি খাবারের অভাবে মারা যায় তাহলে তো এসব প্রাণী আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং আরও নানা ধরনের দুর্যোগ নেমে আসবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর