রবিবার, ৩১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

দূরত্ব থাকলেও শঙ্কায় ট্রেনযাত্রীরা

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

দূরত্ব থাকলেও শঙ্কায় ট্রেনযাত্রীরা

মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর এবার সীমিত পরিসরে আজ রবিবার থেকে ৮টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার ট্রেন চলাচলে প্রতিটি ট্রেনেই দূরত্ব বজায় রেখে বা এক সিট খালি রেখেই যাত্রী ভ্রমণ, থাকবে না কোনো ধরনের বেডিং ব্যবস্থা এবং খাবার গাড়িও। করোনা সংক্রমণ এড়াতে রেলওয়ে প্রশাসন এসবসহ নানা উদ্যোগও গ্রহণ করেছে ট্রেন চলাচলে। তবুও ট্রেন ভ্রমণকালে নানাবিধ শঙ্কা থাকছে বলে জানান যাত্রীরা।

যাত্রীরা বলছেন, ট্রেনে ওঠা-নামা, সিটে বসা, নিজের হাত দিয়ে অন্য সিট ধরা, ট্রেনে কাছাকাছি বা সামনা-সামনি থাকাসহ নানাবিধ আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। রেলওয়ে প্রশাসন বলছেন, যাত্রীরা মাস্ক পরিধান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, দূরত্ব বজায় রেখেই ট্রেনে ওঠা-নামা, এক ঘণ্টা আগেই রেল স্টেশনে আসা এবং অনলাইনে টিকিট কাটাসহ নানা পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। এতে প্রতিনিয়ত মনিটরিংয়ে থাকছেন রেলওয়ের স্ব স্ব বিভাগের দায়িত্বশীলরা। অনলাইনে টিকিট কাটা ট্রেনযাত্রী ওসমান আজিজ বলেন, দীর্ঘদিন পরেই ঢাকায় কর্মস্থলে যাচ্ছি। দেশের করোনা পরিস্থিতিতে অনেক ভয় ও আতঙ্কের মধ্যেই রয়েছি। পরিবার এবং কর্মস্থলের বিষয় চিন্তা করে ঢাকায় যেতেই হবে। দূরত্ব বজায় রাখতে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটা এবং এক সিট অন্তর যাত্রী সিটে বসাসহ নানাবিধ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই রেলওয়ে অনেক কাজ করছে। তবুও যাত্রীদের ওঠা-নামা, দূরত্ব কতটুকু বজায় থেকেই চলাচল করা, মাস্ক, হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করাসহ নানাবিধ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিয়েই শঙ্কা। এতে কতটুকু করোনা সংক্রমণ এড়ানো যাবে সেটা নিয়েও চিন্তিত। একই রকম কথা বললেন একাধিক ট্রেন ভ্রমণকারী।

রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. শামসুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ট্রেন ভ্রমণ করবেন। প্রতিটি ট্রেনই হ্যান্ডস্যানিটাইজার, মাস্ক, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্যে চলাচল করবে। রেলের দায়িত্বশীল স্টাফরা সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে থাকবে। যাত্রীরা ট্রেনে ওঠার আগেই ট্রেনের সব বগি পরিষ্কার করে রাখা হবে। তিনি বলেন, যাত্রীদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয় সঙ্গে নিতে হবে। তাপমাত্রা পরিমাপের সুবিধার্থে যাত্রীদের ট্রেন ছাড়ার কমপক্ষে ৬০ মিনিট আগে স্টেশনে পৌঁছাতে হবে। কোনো অবস্থাতেই টিকিট ছাড়া প্লাটফরমে প্রবেশ করা যাবে না। যাত্রার তারিখসহ ৫ দিন পূর্ব হতে টিকেট ক্রয় করা যাবে বলে জানান তিনি। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এডিশনাল চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (এডিশনাল সিসিএম) মো. মিজানুর রহমান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সব ট্রেন স্টেশনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য গোল চিহ্ন দেওয়া হয়েছে।

যাত্রীরা অনলাইন থেকে টিকিট কেটে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই ট্রেন ভ্রমণ করবেন। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এবার দিনে-রাতে ট্রেন ভ্রমণে যাত্রীরা বেডিং এবং খাবার সুবিধা পাবেন না। যাত্রীরা ট্রেনে ওঠার সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার, মুখে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা নিশ্চিত করা হবে। দর্শনার্থী বা প্লাটফরম টিকিট বিক্রয় বন্ধ থাকবে। একই কথা বললেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) মো. আনসার আলীও।

রেলওয়ে ও রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে সীমিত পরিসরে বিভিন্ন রুটে যেসব ট্রেন চলাচল করবে, সেগুলো হলো- সুবর্ণ এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস-চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম, উদয়ন/পাহাড়িকা এক্সপ্রেস-চট্টগ্রাম-সিলেট-চট্টগ্রাম, কালনী এক্সপ্রেস- সিলেট-ঢাকা-সিলেট, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, সিরাজুল ইসলাম- ঢাকা-সিরাজুল ইসলাম, বনলতা এক্সপ্রেস, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনি এক্সপ্রেস- লালমনিরহাট -ঢাকা- লালমনিরহাট, চিত্রা এক্সপ্রেস-খুলনা -ঢাকা- খুলনার মধ্যে চলাচল করবে। অন্যদিকে ৩ জুন থেকে চলবে ১১ জোড়া ট্রেন। এগুলো হলো, তিস্তা এক্সপ্রেস-ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার-ঢাকা, বেনাপোল এক্সপ্রেস-বেনাপোল-ঢাকা- বেনাপোল, নীলসাগর এক্সপ্রেস-চিলাহাটি- ঢাকা- চিলাহাটি, রূপসা এক্সপ্রেস-খুলনা-চিলাহাটি, কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস-খুলনা-রাজশাহী খুলনা, মধুমতি এক্সপ্রেস- রাজশাহী- গোয়ালন্দঘাট-রাজশাহী, মেঘনা এক্সপ্রেস-চাঁদপুর- চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস-ঢাকা-কিশোরগঞ্জ-ঢাকা, উপকূল এক্সপ্রেস- নোয়াখালী- ঢাকা নোয়াখালী, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস-দেওয়ানগঞ্জ বাজার- ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস-কুড়িগ্রাম- ঢাকা- কুড়িগ্রামের মধ্যে চলাচল করবে। এসব ট্রেনে ভ্রমণকারী প্রত্যেক যাত্রী নিজেকে সুরক্ষায় সচেষ্ট থাকবেন, সহযাত্রীকে সুরক্ষায় সহযোগিতা করবেন।

সর্বশেষ খবর