শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বদলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা

মাটির নিচে তার যাবে এলিফ্যান্ট রোড থেকে ধানমন্ডি, জাহাঙ্গীর গেট থেকে বঙ্গভবন ♦ ভূগর্ভস্থ সাব-স্টেশনের ওপর হবে সুউচ্চ ভবন

জিন্নাতুন নূর

বদলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা

বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের ফলে বদলে গেছে পীর-আউলিয়ার শহর সিলেট। মাথার ওপর জট পাকানো দীর্ঘদিনের বৈদ্যুতিক তারসহ অন্যান্য তার মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ায় বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে বিভাগীয় এ শহর। এ জন্য শহরটি ‘স্মার্ট’ শহরের খেতাব পেয়েছে। একইভাবে সিলেটের মতো বদলে যাচ্ছে ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাও। আর এমনটি হলে ঢাকাও স্মার্ট শহরের তালিকায় নাম লেখাবে। সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ রাজধানীজুড়ে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের তারের জঞ্জাল সরিয়ে তা মাটির নিচে নিয়ে যেতে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নে গতি কিছুটা কমে গেলেও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আশা করছেন, পাঁচ বছরের মধ্যেই বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জালগুলো মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। আবার উন্নত দেশের আদলে বিদ্যুতের সাব-স্টেশনগুলো মাটির নিচে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জায়গার যথাযথ ব্যবহারে এসব স্টেশনের ওপর নির্মিত হবে সুউচ্চ বাণিজ্যিক ভবন।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ( ডিপিডিসি) ‘এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেথেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে দু-এক মাসের মধ্যেই নগরীর বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল সরানোর কাজ অবশেষে বাস্তবায়ন শুরু হবে। প্রথমে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের শেষ মাথা থেকে বিজিবি হয়ে ধানমন্ডি সাতমসজিদ রোডের মাঝখানের এলাকাটিতে বৈদ্যুতিক তার মাটির নিচে নেওয়া হবে। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর গেট থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হবে বৈদ্যুতিক তার। অন্য আরেক প্রকল্পের আওতায় ডিপিসিসি এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) বিদ্যুতের সাব-স্টেশনগুলোকে মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এগুলো নগরীর প্রধান প্রধান এলাকায় অবস্থিত। মূল্যবান এই স্থানগুলোকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার এবং গোটা দেশের চেহারা পাল্টে দেওয়ার জন্য এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিপিডিসি ও ডেসকোর আওতায় রাজধানীতে জমির সঠিক ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে মাটির নিচে দুটি ভূগর্ভস্থ সাব-স্টেশন বসানোর কাজ করা হচ্ছে। সাব-স্টেশনের ওপর ভূমির ওপরের অংশে তখন নির্মাণ করা হবে বহুতল বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এসব বাণিজ্যিক কেন্দ্রের ৫০ শতাংশ স্থান খালি রেখে সেখানে নাগরিকদের জন্য পার্ক তৈরি করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি হবে স্কাডা সেন্টার। এর মাধ্যমে যে কোনো সমস্যাকে মুহূর্তের মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এর ফলে বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমে আসবে। বিদ্যুতের তারগুলো ডার্ক টেপ দ্বারা সুরক্ষিত হওয়ার ফলে এতে রক্ষণাবেক্ষণের খরচও অনেকটা কমে আসবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এখন এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গোটা নগরীর চিত্র বদলে দেওয়া সম্ভব। ডিপিডিসির আওতাধীন জিটুজি প্রকল্পটির মাধ্যমে ধানমন্ডিতে কয়েক কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ লাইনের কাজ করা হচ্ছে। সেখানে           ঝুলে থাকা বৈদ্যুতিক তার নিয়ে যাওয়া হবে। ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘চুক্তি স্বাক্ষর যখন হয়েছিল তখন সঙ্গে সঙ্গেই ডিপিডিসি নেটওয়ার্কিংয়ের কাজ শুরু করে। এর মধ্যে ডিজাইন এবং প্রিলিমিনারি ডিজাইনের কাজও ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণের জন্য এই প্রকল্পের কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজে জড়িত চীনা বিশেষজ্ঞরা অবস্থান করছেন চীনের উহান শহরে। এর পরও আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’

সম্প্রতি চীনা বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসে দলটির ঢাকায় ফিরে আসার কথা। এর পরই মাটির নিচে তারের জঞ্জাল সরিয়ে নেওয়ার প্রত্যক্ষ কাজ শুরু হবে। যদিও মূল কাজ তথা ডিজাইনের কাজ হয়ে গেছে। এবার ডিজাইন বাস্তবায়ন ও ক্যাবল ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের কাজ শুরু হবে। দু-এক মাসের মধ্যে এ কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, আপাতত শুধু বৈদ্যুতিক তার মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলেও ভবিষ্যতে ইন্টারনেট ও ডিশ লাইনের তারগুলো মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য বেশ কয়েকটি গণশুনানি হয়েছে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ক্যাবল ও ইন্টারনেট অপারেটরদের নিয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠক করা হয়েছে। বর্তমানে আরেক প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে জাইকার অর্থয়ানে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতের সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ডিপিডিসি ছাড়াও ডেসকো কর্তৃপক্ষ রাজধানীর গুলশান এলাকায় এ ধরনের আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। তবে এ প্রকল্পের ব্যতিক্রমী বিষয় হচ্ছে ভূগর্ভস্থ এসব সাব-স্টেশনের ওপর বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। এসব বহুতল ভবনে থাকবে অফিস ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। আশা করা হচ্ছে, এই ভবনগুলো ১২ থেকে ১৫ তলাবিশিষ্ট হবে। যেহেতু এটি নতুন ধরনের প্রযুক্তি, এ জন্য জাইকার পরামর্শে ডিপিডিসি জাপানি পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে। টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি নামের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি এ কাজের জরিপও করেছে। এমনকি পুরো টেন্ডার ডকুমেন্টও এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তৈরি করে দেওয়ার কথা। আশা করা হচ্ছে, আগামী সেপ্টেম্বরে এর টেন্ডার কাজ শুরু হবে। আর ভবন নির্মাণের কারিগরি টিম রাজউকের সঙ্গে আলাদা আলোচনা করেই ভবন নির্মাণ করবে। বিকাশ দেওয়ান বলেন, জমির সঠিক ব্যবহারের পাশাপাশি শহরের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য মাটির নিচে সাব-স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই বৈদ্যুতিক সঞ্চালন ব্যবস্থা মাটির নিচে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশও সেই পথে হাঁটছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর