বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বেগম রোকেয়ার বসতভিটার ৩৫০ বিঘা জমির হদিস নেই

স্মৃতিকেন্দ্রে বাতি জ্বলে না, ব্যবহার অযোগ্য গেস্ট হাউস

নজরুল মৃধা, রংপুর

বেগম রোকেয়ার বসতভিটার ৩৫০ বিঘা জমির হদিস নেই

সমস্যা অবহেলার শেষ নেই। তবু প্রতিদিনই কিছু দর্শনার্থী পরিদর্শনে যান বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আলোর প্রদীপ জ্বালানিয়া বেগম রোকেয়ার বসতভিটা স্মৃতিকেন্দ্র আঁধারে ঢাকা। ১৯৯৭ সালে রোকেয়ার বসতভিটায় একটি স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। স্মৃতি কেন্দ্রে রয়েছে একটি অফিস ভবন, গেস্টহাউস, মিলনায়তন, ডরমেটরি, গবেষণা কক্ষ, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, আবাসিক সুবিধাসহ অবকাঠামো। পুকুরপাড়ে তৈরি হয়েছে বেগম রোকেয়ার একটি ভাস্কর্য। গ্রন্থাগার থাকলেও যুগোপযোগী বই-সাময়িকী নেই। মিলনায়তনের অবস্থাও করুণ। লোকবল সংকট প্রকট। সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যন্ত্রপাতি থাকলেও কার্যক্রম না থাকায় ধুলা-ময়লা জমে নষ্ট হচ্ছে। স্মৃতি কেন্দ্রটিতে থাকে অন্ধকারের ভুতুড়ে পরিবেশ। একইভাবে রোকেয়ার জন্মভিটায় বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করা থাকলেও বছরের অধিকাংশ সময় আলো জ্বলে না। তাঁর বসতভিটার ৩৫০ বিঘা জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আঁতুড়ঘরে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল কে দেবে- এ নিয়ে দ্বন্দ্বে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। ফলে দর্শনার্থীরা সন্ধ্যায় এলে উঁকি মেরে দেখার সুযোগটাও মেলে না। এ ছাড়া সেলাই প্রশিক্ষণ, এমফিল গবেষণা, সংগ্রহশালার কোনো কার্যক্রম নেই এখন। নামকাওয়াস্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্মৃতি কেন্দ্রটি।’ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু দিবস। পায়রাবন্দকে শিক্ষা-সংস্কৃতির অন্যতম পাদপীঠ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা আর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি আজও। বেগম রোকেয়ার মৃত্যুর ৮৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তাঁর বসতভিটার ৩৫০ বিঘা জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ওই জমি কারা দখলে রেখেছে তার কোনো তালিকাও নেই প্রশাসনের কাছে। ৯ ডিসেম্বর এলে কলকাতার শোদপুর থেকে রোকেয়ার দেহাবশেষ পায়রাবন্দে সমাহিত করার দাবি জোরালো হয়। এরপর আবার সবাই নিশ্চুপ থাকে। রংপুরের পায়রাবন্দের খোর্দমুরাদপুর গ্রামে বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় মারা গেলে তাঁকে শোদপুরে সমাহিত করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে রোকেয়া পরিবারের ৩৫০ বিঘা জমি, পুকুর ও বসতভিটা। স্থানীয় কজন জানান, রোকেয়া দিবস এলে কোনোমতে ধোয়ামোছার কাজ হয় এখানে। মেলা বসে। মেলা কেন্দ্র করে রোকেয়ার জমি দখলকারীরাই লাভবান হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে স্মৃতি কেন্দ্রকে বিকেএমইএর গার্মেন্টস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হয়। একপর্যায়ে স্মৃতি কেন্দ্রটি বাংলা একাডেমিকে হস্তান্তর করা হয়।

দমদমা থেকে রোকেয়ার বাড়ি যাওয়ার রাস্তা প্রশস্তকরণ, সুবিধাজনক স্থানে বাস স্টপেজ, স্কুল-কলেজ, স্মৃতি পাঠাগার স্মৃতি কেন্দ্রের সঙ্গে একীভূত করে এর কার্যক্রম পরিচালনার সুপারিশ আজও ফাইলবন্দী। ৯ ডিসেম্বর এলেই ধোয়ামোছার কাজ হয়, বিদ্যুতের নষ্ট বাল্বগুলো ঠিক করা হয়। কিছুদিন পর স্মৃতি কেন্দ্রটি ফিরে যায় আগের রূপে। বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল-ফারুক বলেন, ‘করোনার ফলে এবার মেলা হবে না। স্মৃতি কেন্দ্র সংস্কারকাজের জন্য ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমরা রোকেয়া গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছি, আশা করছি অচিরেই বাস্তবায়ন হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর