বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ভাঙন ঝুঁকিতে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভাঙন ঝুঁকিতে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে হুমকির মুখে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শতাধিক বাড়ি-ঘর। রাজশাহীতে পদ্মার পানি প্রতিদিন গড়ে ১০ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে। নদীতীরে দেখা দিয়েছে ভাঙন। পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট। যমুনা নদীতে দ্রুত বাড়ছে পানি। নদী তীরবর্তী এলাকায়ও শুরু হয়েছে ভাঙন। এ ছাড়া তিস্তা-ধরলার অব্যাহত ভাঙনে দিশাহারা হয়েছেন মানুষ। এদিকে রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। সুরমা ছাড়া দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে, দেখা দিয়েছে ভাঙন। গোয়ালন্দ সমতল স্টেশনে পদ্মা এবং কামারখালীতে গড়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানিও বাড়তে পারে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলের মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুরমা ছাড়া দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের গাণিতিক মডেলের তথ্য অনুযায়ী, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলের মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এই সময়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কক্সবাজার জেলা ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলের নদীগুলোর পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিন্টার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গড়াই নদীতে দিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

ভাঙনের ঝুঁকিতে স্থাপনা : পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁঁকিতে রয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শতাধিক বাড়িঘর। ইতিমধ্যেই নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের কয়েকটি স্থানে ধস দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়াসহ স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে অসংখ্য স্থাপনা ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হবে বলে জানান স্থানীয়রা। এ ছাড়া আন্ধারমানিক, বকচর ও খালপাড় বয়রা এলাকায় বাঁধের বালু ভর্তি জিও ব্যাগগুলো ধসে নদীতে চলে গেছে। নদী তীরের বেশ কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে বাঁধ সংলগ্ন উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, হরিরামপুর থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা ডাকবাংলো, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবন ও বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় আন্ধারমানিক বাজারসহ অসংখ্য বসতভিটা ও ফসলি জমি নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।

বাড়ছে পদ্মার পানি, ভাঙছে তীর : রাজশাহীতে পদ্মায় এখন প্রতিদিন গড়ে ১০ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। নদীতীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি। কোথাও কোথাও আবার পুরনো বাঁধের ব্লক নিচে নেমে যাচ্ছে। নগরীর বড়কুঠি পয়েন্টে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন গড়ে ১০ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। এ ছাড়া রাজশাহী নগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার ও কাজলা এলাকায় নদীতীরে পানি উঠে গেছে। এ বছরের পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট। সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে লঞ্চঘাটের একটি পল্টুন।

 

 

গতকাল ভোর থেকে লঞ্চঘাট এলাকায় আবারও ভাঙনের তান্ডব দেখা গেছে। ভোর থেকে ভাঙনে লঞ্চঘাট এলাকার প্রায় ৩০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

যমুনায় বাড়ছে ভাঙন : যমুনা নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১৯ সে.মি. বৃদ্ধি বিপৎসীমার ৬৮ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা-ফসলি জমি। নিঃস্ব হয়ে পড়ছে মানুষ।

 

নাটোরের পানিবন্দী পাঁচশ পরিবার : নাটোরের লালপুরে পদ্মায় পানি বৃদ্ধিতে প্রায় পাঁচশ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নদী চরাঞ্চলের প্রায় আটশ একর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। গত কয়েক দিন ধরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নওশারা সুলতানপুর, চাকলা বিনোদপুর, দিয়াড় শংকরপুর, আরাজি বাকনাই, রসুলপুর ও মোহরকয়ার আংশিক এলাকা পানিতে ডুবে গেছে।

চরভদ্রাসনে ভাঙন : পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে ফরিদপুর চরভদ্রাসনের সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গী গ্রামে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। ঝুঁকিতে রয়েছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত ৬ একর ফসলি জমি।

ভাঙনে দিশাহারা মানুষ : লালমনিরহাটে তিস্তা-ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার নিজ দিয়ে প্রভাবিত হলেও দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। অব্যাহত ভাঙনে দিশাহারা মানুষ। রাত হলেই তিস্তা-ধরলাপাড়ে নেমে আসে আতঙ্ক। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাতকাটান মানুষ। জানা গেছে, তিস্তা ধরলার ৩৭টি পয়েন্টে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা ও তিস্তার ভাঙনে ৫৭টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর