শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

রংপুরে করোনাকালে বাল্যবিয়ের হার বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সারা দেশে ৭ হাজারের বেশি বাল্যবিয়ে হয়েছে। এসব বাল্যবিয়ের অধিকাংশই হয়েছে রংপুর অঞ্চলে। রংপুর জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের তথ্য এটি। তথ্য অনুযায়ী রংপুরে ৭০০-এর ওপর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই করোনা সময়ে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। করোনাকালের দেড় বছরে রংপুর অঞ্চলে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ হাজার কিশোরী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। ১৩-১৪ বছর হলেই অভিভাবকরা মনে করেন মেয়ে বড় হয়েছে। তাই অপরিণত বয়সেই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। এর মধ্যে হতদরিদ্র ঘরের মেয়েরা বেশি। বিয়ের পর যৌতুকের দাবি মেটাতে না পেরে স্বামীর অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গৃহছাড়া হয়েছে।

বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরীর মধ্যে হাতে গোনা দুই-চারজনের পাশে এনজিওরা দাঁড়ালেও বাদবাকিরা রয়েছে ভাগ্যবঞ্চিতদের তালিকায়।

করোনাকালে বাল্যবিয়ে আর যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার ২৫ জন কিশোরীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস তাদের সেভ হোম আলোকিত ভুবনে নিয়ে আসেন। ভাগ্যবঞ্চিত এসব কিশোরীকে ছয় মাস হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সেভ হোমে কথা হয় বাল্যবিয়ের শিকার কয়েকজন কিশোরীর সঙ্গে। তারা বলেন, বাবা-মা তাদের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের পর স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের কেউ যৌতুকের কারণে, কেউ আবার স্বামী মাদকাসক্ত হওয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়ে সেভ হোমে আশ্রয় নিয়েছে। এই অঞ্চলে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বাল্যবিয়ে হচ্ছে।

রংপুর জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, বাল্যবিয়ের প্রবণতা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রংপুর অঞ্চলে। কোথাও বাল্যবিয়ের খবর পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে  ইউএনওকে জানাই। তারা অনেক সময় ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই বাল্যবিয়ে হয়ে যায়। এ কারণে এই অঞ্চলে বাল্যবিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না।  

আরডিআরএসের হেভ হোমের প্রজেক্ট ম্যানেজার ফরিদা ইয়াসমিন জানান, আমাদের দেশে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া আইনসম্মত নয়। তাদের সেভ হোমে বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে ২৫ জন নির্যাতিতকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিটি উপজেলা থেকে বাল্যবিয়ের শিকার নির্যাতিত কমপক্ষে ১০টি করে আবেদন জমা পড়েছে। সেভ হোমের ধারণক্ষমতা না থাকায় ওসব কিশোরীকে পুনর্বাসন করা সম্ভব হচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর