শনিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নানামুখী চাপে ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠন

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

নানামুখী চাপে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো। সংশ্লিষ্ট দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় এখন মাঠে সরকারি দলের প্রতিপক্ষ হয়ে পড়েছেন তারা। এ ছাড়া গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনায় প্রায় ১ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থক। যার প্রভাব পড়ে কওমি মাদরাসাভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। এতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে হেফাজতে ইসলাম। আর জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরেই প্রকাশ্যে নেই।

জানা যায়, ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনগুলো মামলা এড়াতে, নিজের প্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থল থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় সরকারি মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর একাধিক নেতা জানান, বর্তমানে ধর্মভিত্তিক দলগুলো কতটা সংকটে আছে, তার দৃষ্টান্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের বিএনপির জোট ছাড়ার ঘটনা। এ ছাড়া শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস সংকটে রয়েছে। ৩টি দলের মহাসচিবসহ শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার হন। তবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বিএনপির জোট ছাড়ার পর দলটির মহাসচিব জামিনে রয়েছেন। গত ১৪ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে কয়েক ঘণ্টা পর দলটি জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে সহিংসতার মামলায় জমিয়তের ৬০ নেতা-কর্মী আসামি হন। এর বাইরে প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর দল ইসলামী ঐক্যজোটের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এবং দলটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কিছু নেতা-কর্মীকেও গ্রেফতার করা হয়; যারা হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত। দেশে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামপন্থি দলের সংখ্যা ১০। নিবন্ধিত ইসলামপন্থি দলগুলোর কেউ-ই এখন বিএনপি জোটে নেই।

এর বাইরে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট (আবদুর রকিব) ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (মনসুরুল হাসান) আরেকটি অংশ ২০-দলীয় জোটে থাকলেও তাদের নিবন্ধন নেই।

অন্যদিকে নিবন্ধিত ইসলামপন্থি অন্য দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক। এ ছাড়া ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (বাহাদুর শাহ), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মান্নান) ও জাকের পার্টিও সরকারের সঙ্গে আছে। এর বাইরে বিএনপির জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া মুফতি আমিনীর দল ইসলামী ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সরকারঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। যদিও সম্প্রতি মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতারের পর সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ছেলে মামুনুল হক বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। গ্রেফতারের পর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা হয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন মোহাম্মদপুর জামিয়া আরাবিয়া মাদরাসাও সম্প্রতি হাতছাড়া হয়ে গেছে। এখন মামুনুল হককে রাজনীতিতে আর না জড়ানোর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এ ছাড়া হাফেজ্জী হুজুরের দল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও সরকারের সঙ্গে সখ্য রেখে চলছে বলে দলের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়। এর বাইরে নিবন্ধিত ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন কোনো জোটে নেই।

জানা যায়, প্রায় এক দশক ধরে প্রকাশ্য রাজনীতিতে নেই জামায়াতে ইসলামী। দেড় বছর ধরে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে অনলাইনে। নেতারা প্রায় প্রতিদিনই অনলাইনে ভার্চুয়াল সভা করছেন। জামায়াতের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, নানা উপায়ে দলের নিয়মিত কাজগুলো চললেও সরকারি বাধা-বিপত্তির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে সারা বছরই নানা বিষয়ে সক্রিয় চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন। তারা স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছে। ইসলামী আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, সামগ্রিকভাবে সবাই চাপে আছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসলামী দলগুলো নজরদারিতে আছে। এটা আমাদের জন্য বড় সংকট।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর