সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সুনামগঞ্জ সদর ও শান্তিগঞ্জে নৌকার ভরাডুবি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থীদের শোচনীয় ভরাডুবি ঘটেছে বলে এজেন্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। এখানে চমক দেখিয়েছে জাতীয় পার্টি। দুটি ইউনিয়নে লাঙল প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। দুটি ইউনিয়নে জাপা এমপির সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে, সব ইউনিয়নে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছেন জাপা প্রার্থীরা। এদিকে, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ছয়টিতে বিজয়ের পথে আছে আওয়ামী লীগের দলীয় বিদ্রোহী ও বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। মাত্র দুটিতে এগিয়ে আছে নৌকা। ক্ষমতাসীন দলের জয় জয়কারের এই যুগে নৌকার এমন ভরাডুবিতে জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের তির্যক সমালোচনা করছেন দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। রবিবার দিনভর উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের আটটিতে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, জমিয়ত ও বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। মোহনপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী মাঈনুল হক ও দলীয় প্রার্থী শিতেষ তালুকদার মঞ্জুর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলাকালে উত্তেজনা দেখা দেয়। ওই তিনটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা না করে ভোট গণনার জন্য উপজেলা সদরে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।

বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নে জাপার শওকত আলী, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নে জাপার রশিদ আহমদ চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। এখানে নৌকা লড়তেই পারেনি। কুরবান নগর ইউনিয়ন ও মোল্লাপাড়া ইউনিয়নে জাপার স্থানীয় সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ সমর্থিত প্রার্থী যথাক্রমে আবুল বরকত ও নূরুল হক বিজয়ী হয়েছেন। ইভিএম ভোটে লক্ষণশ্রী ইউনিয়নে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ টানা তৃতীয়বারের মতো জয় পেয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার পরও এই ইউনিয়নে অল্প ব্যবধানে হেরেছেন জাপার আবদুল মান্নান।

এদিকে, মোহনপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাইনুল এগিয়ে থাকলেও তিনটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে উত্তেজনা বিরাজ করছে। রঙ্গারচর ইউনিয়নে জাপার ফয়জুর রহমান ও বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে।

অপরদিকে কাঠইর ইউনিয়নে জমিয়তের মুফতি শামসুল ইসলাম জাপার ফারুক মেনরকে ৬৭ ভোটে হারিয়ে চেয়ারম্যান পদে দ্বিতীয় মেয়াদে বিজয়ী হয়েছেন বলে জানা গেছে। উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে জাপার প্রার্থী সিরাজুল ইসলামকে সামান্য ব্যবধানে হারিয়ে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আমির হোসেন রেজা। একইভাবে রঙ্গারচর ইউনিয়নে জাপার ফয়জুর রহমানকে অল্প ব্যবধানে হারিয়ে চেয়ারম্যান পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল হাই। এদিকে, রবিবারের ভোটে একইভাবে নৌকার ভরাডুবি ঘটেছে একসময়ের সদর উপজেলা থেকে নতুন উপজেলা দক্ষিণ সুনামগঞ্জেও (শান্তিগঞ্জ)।

এজেন্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, দক্ষিণ সুুনামগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দুটিতে, চারটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। দুটি ইউনিয়নে এগিয়ে আছেন নৌকার প্রার্থীরা।

এ উপজেলার, শিমুলবাঁক ইউনিয়নে শাহিনুর রহমান, জয়কলসে আবদুল বাছিত সুজন, পূর্ব পাগলায় মাসুক মিয়া ও পাথারিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী শহিদুল ইসলাম বিজয়ী হয়েছেন বলে জানা গেছে। উপজেলার দরগাপাশায় সুফি মিয়া ও পশ্চিম বীরগাঁওয়ে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী লুৎফুর রহমান জায়গিরদার জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া পূর্ব বীরগাঁওয়ে রিয়াজুল ইসলাম ও পশ্চিম পাগলায় আওয়ামী লীগের জগলুল হায়দার এগিয়ে রয়েছেন। 

উল্লেখ্য, ররিবার তৃতীয় ধাপে সুনামগঞ্জ সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ১০৬ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ২১১ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৭৪২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দুটি উপজেলার মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ৫৯৪ জন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর