সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

আইসের ২২ চালানের হোতারা এখনো অজানা

মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে আইসের চালান দেশে ঢুকছে

মাহবুব মমতাজী

দেশে আইসের ২২ চালানের পেছনে হোতা কারা এখনো তার কোনো তথ্য পায়নি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তবে সংস্থাটি জানতে পেরেছে, যে পথে ইয়াবা ঢোকে, সেই পথে আইসও আসে। অর্থাৎ মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইয়াবার সঙ্গে আইসের চালান দেশে ঢুকছে। আইস বা ক্রিস্টাল মেথের প্রথম চালান ধরা পড়ে ২০১৯ সালে। এর আগে আইসের চালান দেশে এসেছিল কি না, সে বিষয়েও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। আবার গত তিন বছরে আইসের যেসব চালান ধরা পড়েছে, তাতে শুধু বাহককে আসামি করেই মামলা হয়েছে। এসব মামলার তদন্তেও ঘটনার আড়ালের তথ্য উঠে আসেনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ঢাকা মেট্রো উত্তর) সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান এ প্রতিবেদককে জানান, আইসের নেপথ্যে থেকে কারা নিয়ন্ত্রণ করছে সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো কিছু জানা যায়নি। এটি সংঘবদ্ধ চক্র। একক কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে যেসব পথে ইয়াবা আসে সে পথেই আসে আইস। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী গত বছর দেশে আইসের ২২টি চালান ধরা পড়ে। ঢাকা বিভাগে ১২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯টি। অন্য চালানটি পিরোজপুরে ধরা পড়েছে। এসব চালানে ৩০ কেজির বেশি আইস জব্দ করা হয়।

তবে চালান ধরা পড়লেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আইসের বাহক ছাড়া অন্যদের বিষয়ে তথ্য বের করা যায়নি। এমনকি বাহকের কাছে যিনি আইস পৌঁছে দিয়েছিলেন, তাকেও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি বেশির ভাগ ঘটনায়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে আইসের প্রথম যে চালানটি রাজধানীর ধানমন্ডিতে ধরা পড়ে, তা বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ঢুকেছিল। এখন মূলত মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইয়াবার সঙ্গে আইসের চালান দেশে ঢুকছে। আর চাহিদার কারণে আইস ও ইয়াবার সরবরাহ বাড়ছে। ঢাকায় আইস-ইয়াবার অনেক বেশি গ্রাহক হয়ে গেছে। এ কারণে এসব মাদকের চালান আসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে সীমান্তে মাদক চোরাচালান বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আইসের চালান নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিতে সঙ্গে বাহককে অল্প দামের একটি মোবাইল ফোন দেন কারবারিরা। ওই ফোনের নম্বরে বাহকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন তারা। যোগাযোগের সময় মূল কারবারিরা ছদ্মনামে পরিচিত হন। গত বছর অক্টোবরে ফেনীতে ২০০ গ্রাম আইসসহ সাব্বির নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তার বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নে। তার কাজ ছিল কক্সবাজার থেকে আইসের একটি চালান ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া। এ ঘটনায় সাব্বিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে তার বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। আইস সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মাদক দেখতে স্বচ্ছ কাচের (ক্রিস্টাল) মতো। এ মাদক সেবনে নিদ্রাহীনতা, স্মৃতিবিভ্রম, মস্তিষ্কবিকৃতিসহ নানা শারীরিক-মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে এ মাদক সেবনে ওজন হারানো, কিডনি ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা, বিষণ্ণতা ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো গুরুতর শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। আইস ইয়াবা তৈরির মূল উপাদান। ১ গ্রাম আইসের দাম ১৫-২০ হাজার টাকা। জানা গেছে, ফেনীর ঘটনায় মামলার তদন্তের সময় তদন্ত কর্মকর্তা আরও একজনের নাম পেয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি আর এগোননি। একজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ফেনী জেলার সহকারী পরিচালক আবদুল হামিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। সূত্র জানান, মাদক উদ্ধারের গতানুগতিক ধারাতেই আইস জব্দের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। আইসসহ যাকে পাওয়া যাচ্ছে তাকেই আসামি করা হচ্ছে। কিন্তু মূল চক্রে যারা আছেন তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তা হলো, দেশে আইস ছড়িয়ে দিতে দুবাইকেন্দ্রিক একাধিক চক্র সক্রিয়। তারা অবৈধভাবে মিয়ানমারে টাকা পাঠিয়ে আইস কেনে। পরে তা কক্সবাজার-বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে দেশে নিয়ে আসে। ওই চক্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর