জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের বিন্দুমাত্র ভূমিকা না থাকলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার এই অঞ্চলের মানুষ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উত্তর দিক দিয়ে ঢুকছে হিমালয়ের বরফ গলা পানি। সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ বন্যা। নদী ভাঙনে উদ্বাস্তু হচ্ছে লাখো মানুষ। অন্যদিকে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ায় দক্ষিণ দিক দিয়ে দেশের মধ্যে ঢুকছে লবণপানি। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কৃষি, যা খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলেছে। উন্নত দেশগুলো কার্বণ নিঃসরণ বন্ধ না করায় এ ঝুঁকি বেড়েই যাচ্ছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হবে ধরে নিয়েই বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সব ঝুঁকি মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। লবণপানি ও নদীভাঙন ঠেকাতে উঁচু করে স্থায়ী বাঁধ দিতে হবে। পরিবর্তিত আবহাওয়ায় সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবনে গবেষণা বাড়াতে হবে। গতকাল ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন : বাংলাদেশের অগ্রগতি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের (ইডব্লিউএমজিএল) কনফারেন্স রুমে বৈঠকটি আয়োজন করে ডেইলি সান ও ইউএস এইড বাংলাদেশ। ডেইলি সানের সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও নির্বাহী সম্পাদক রেজাউল করিম লোটাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো- চেয়ারম্যান ও সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিপিআরডি) প্রধান নির্বাহী মো. শামছুদ্দোহা, ইউএস এইডের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ শাহাদাৎ হোসেন শাকিল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও পদক্ষেপ তুলে ধরেন বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রেজাউল হক। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ফান্ড গঠনে আমরা ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট গঠন করেছি। উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল কেন্দ্রিক নানা প্রকল্প নিয়েছি। বক্তারা বলেন, কার্বন নিঃসরণ কমাতে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ১০টি কয়লা প্রকল্প বাদ দিয়েছে। অথচ, যারা বিশ্বের সর্বোচ্চ দূষণের জন্য দায়ী, তারা বন্ধ করছে না। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হবে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে। উত্তর দিক থেকে বরফ গলা পানিও আসবে, পলি পড়বে, নদী ভাঙবে, বন্যা হবে, আবার দক্ষিণে সমুদ্রের পানির উচ্চতাও বেড়ে লবণপানি ঢুকে কৃষি ধ্বংস করে দেবে। এটা মাথায় রেখেই আমাদের ডেল্টা প্লান সাজাতে হবে। আমাদের ফোকাস দিতে হবে অভিযোজনে। উঁচু করে স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে ফসল উৎপাদনের সময় বদলে যাচ্ছে।
এ জন্য প্রয়োজনীয় বীজ খুঁজে বের করতে হবে। এ ছাড়া শুধু স্বল্পমেয়াদি ক্ষতি নয়, জলবায়ু পরিবর্তনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি ও উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে গবেষণা বাড়াতে হবে।