শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে বাড়ছে নারীর প্রতি বিকৃত আচরণ

পাঁচ বছরে ধর্ষণ বেড়েছে আড়াই গুণ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বাড়ছে নারীর প্রতি বিকৃত আচরণ

চট্টগ্রামে থামছে না নারীর প্রতি বিকৃত আচরণ। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ নারীর প্রতি সহিংসতা। গত পাঁচ বছরে নগরীতে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে আড়াই গুণ। সংশ্লিষ্টদের দাবি, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া, তদন্তে গাফিলতি ও আইনি জটিলতার কারণেই বেড়ে চলেছে ধর্ষণের মতো ঘটনা। এটা রোধ করতে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নারীদের রক্ষার আত্মকৌশল শেখানোর ওপর জোর দিয়েছেন তারা।

অপরাধ বিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন বলেন, ‘পুলিশি তদন্তে গাফিলতি এবং আইনি জটিলতার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ধর্ষকের উপযুক্ত বিচার হয় না। ধর্ষণের উপযুক্ত বিচার না হওয়ায় দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্ষণ রোধ করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নারীদের শিখাতে হবে নিজেকে রক্ষার প্রয়োজনীয় কৌশল।’

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) শামসুল আলম বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংস আচরণগুলো আমরা গুরুত্ব সহকারেই দেখি। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।’ সিএমপি সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর ১৬ থানায় ২০২১ সালে ২৫১ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৯৮ জোরপূর্বক ধর্ষণের ঘটনা। বাকিগুলো ফুসলিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এ ছাড়া ২০২০ সালে নগরীতে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা রেকর্ড হয় ২৪৮টি, ২০১৯ সালে ১৯৫টি, ২০১৮ সালে ১৩০টি এবং ২০১৭ সালে ১০৮টি মামলা রেকর্ড হয় চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন থানায়। কাগজ-কলমের হিসাবে বিগত পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম নগরীতে রেকর্ডভুক্ত ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে আড়াই গুণ। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, চট্টগ্রাম নগরীতে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের যত ঘটনা ঘটে তার সিকি ভাগও মামলা দায়ের হয় না। লোকলজ্জার ভয়ে অনেক পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়। নারীর প্রতি সহিংস এসব ঘটনা মামলা হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হলে এ সংখ্যা বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।

জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গাণিতিক হারে বাড়ছে ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়ের ঘটনা। চাকরি থেকে বাসায় ফেরার সময়, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার সময় কিংবা নারীরা নিজের বাসায় শিকার হচ্ছেন যৌন নিপীড়নের। এসব ঘটনার শিকারদের উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শিশু, কিশোরী এবং তরুণী। যাদের বয়স পাঁচ থেকে ২৫ বছরের মধ্যেই। এ ছাড়া বিয়ের আশ্বাস, ব্ল্যাকমেইল করে কিছু কিছু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে নগরীতে। বেশির ভাগ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী, কিশোর গ্যাং লিডার এবং স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। গণধর্ষণের জড়িতদের দুই- একজনকে গ্রেফতার করা হলেও বাকিরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর