বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

রসিক নির্বাচনে জাপা নির্ভার, আওয়ামী লীগে দুই কাঁটার যন্ত্রণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী এক এক করে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠ ছেড়ে দিলেন। প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোয় জাতীয় পার্টি অনেকটা নিষ্কণ্টক হলেও আওয়ামী লীগে কাঁটা রয়ে গেছে। দলের দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ এমনটাই মনে করছেন অনেকে।

মহানগর বিএনপির নেতা কাওসার জামান বাবলা সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন যে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এর আগের দিন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মাহবুবার রহমান বেলাল। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক পৌর মেয়র জাপা থেকে বহিষ্কৃত নেতা আবদুর রউফ মানিক মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়েছেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী শ্রমিক লীগ নেতা এম এ মজিদ দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন না বলে জানালেও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করছে।

নির্বাচনের কয়েক মাস আগ থেকে চার প্রার্থী নগরীতে ব্যাপক  প্রচার-প্রচারণা চালালেও শেষ পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত নেন নির্বাচন করবেন না। অনেকের ধারণা, হেভিওয়েট এসব প্রার্থী নির্বাচন না করায় জাপা প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা প্রায় বিনা বাধায় জয়ী হতে পারবেন। বিশ্লেষকদের মতে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মীদের ধরে রাখতে না পারলে বিগত নির্বাচনের মতো বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজয় বরণ করতে হবে দলটিকে।  কারণ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে আওয়ামী লীগের আরও দুই প্রার্থী নির্বাচন করছেন।

এদিকে গতকাল দুপুরে একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা বলেছেন, দল অনুমতি না দেওয়ায় আমার পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না।  বিএনপি মনে করে অবৈধ স্বৈরাচারী সরকারের পতনের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন করে সব দলের অংশ গ্রহণে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা হবে। সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করবে। বিএনপি আরও মনে করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত দলগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠন করে নতুন উদ্যমে রাষ্ট্র মেরামতের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

অপরদিকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া প্রসঙ্গে জামায়াত নেতা মাহবুবার রহমান বেলাল বলেন, এই সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি নির্বাচন করবেন না।

জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী আবদুর রউফ মানিক নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আমি বিদেশে ছিলাম। আমাকে লাঙ্গল প্রতীক দেওয়া হবে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে মনোনীত করা হয়নি। তাই আমি নির্বাচন করব না।

এদিকে শ্রমিক লীগ নেতা এম এ মজিদ বলেছেন, আমি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না। দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে আমি তার পক্ষে থাকব।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু বলেন, আমি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি।  জনগণের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাই আমি নির্বাচন করব।

জাপা প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, রংপুর লাঙ্গল ও জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। এখানে লাঙ্গল বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করবে।

এদিকে মনোনয়ন জমাদানের শেষ দিন গতকাল আওয়ামী লীগের হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু, মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লতিফুর রহমান মিলনসহ অন্যরা মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনে মেয়র পদে ১৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। এর মধ্যে চারজন মনোনয়নপত্র জমা না দিয়ে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

এখন যারা নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন, তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি, সদ্য সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রংপুর মহানগর সভাপতি আমিরুজ্জামান পিয়াল, মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন, জাকের পার্টির নেতা খোরশেদ আলম, ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বনি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আতাউর জামান বাবু, জাসদের মো. সফিয়ার রহমান, স্বতন্ত্র মো. আবু রায়হান, খেলাফত মজলিসের মো. তৈহিদুর রহমান মন্ডল। আগামী ২৭ ডিসেম্বর ভোট। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ নভেম্বর। যাচাই-বাছাই ১ ডিসেম্বর। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ৯ ডিসেম্বর। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত  ভোটগ্রহণ চলবে। ভোট কেন্দ্রগুলোতে ইভিএম ছাড়াও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

সর্বশেষ খবর