মাসুকুর রহমান ওরফে রণবীর ওরফে মাসুদ। ২০০৭ সালের আগে পোস্ট অফিসে চাকরি করতেন। পরে ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েন। ডাকাতির মামলায় কারাগারে যান। সেখানে জেএমবি সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয় তার। এরপর জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। জেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে জেএমবিতে যোগ দেন তিনি। ২০১৭ সালের দিকে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যোগ দেন রণবীর। প্রায় এক বছর আগে সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান হন তিনি। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এর আগে, সোমবার ভোরে কক্সবাজারের কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ‘এ’ ব্লক এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসারের সামরিক শাখার প্রধান রণবীর ও তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ আবু বাশার মৃধাকে গ্রেফতার করে র্যাব। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন, ১০ রাউন্ড গুলি, দুটি একনলা বন্দুক, ১১টি ১২ বোরের কার্তুজ, একটি খালি কার্টিজ, ১০০ রাউন্ড ২২ বোরের গুলি ও চাঞ্চল্যকর ভিডিও কন্টেন্ট উদ্ধার করা হয়। এখন পর্যন্ত জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে জড়িত ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া এই সংগঠনকে সহায়তা এবং সামরিক প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, রণবীরের সহযোগী বাশার হাটহাজারীতে একটি মাদরাসায় পড়াতেন। তিনি দীর্ঘদিন জঙ্গি সংগঠন হুজির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ওই সময় ঝালকাঠিতে একটি মামলায় প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাগারে ছিলেন তিনি। ২০১৬-১৭ সালের দিকে জামাতুল আনসারে যোগ দেন তিনি।
গ্রেফতার জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সামরিক শাখার প্রধান রণবীরের কাছ থেকে সংগঠনটির আমিরের অবস্থানের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। রণবীরের কাছ থেকে উদ্ধার করা ভিডিওতে দেখা যায় কীভাবে তারা পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীর সহায়তায় দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
মাদরাসায় অনুদানের কথা বলে দেশ ও বিদেশ থেকে টাকা এনে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কথিত হিজরতে নামে পাহাড়ে নিয়ে অন্তত ৫০ যুবককে দেশি-বিদেশি অস্ত্র দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নামে জঙ্গি সংগঠনটি। হামলার মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেওয়ার পরিকল্পনায় পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তারা। সবশেষ কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান গ্রেফতার হলে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। জব্দ করা হয় ওই ভিডিওটি।
সেখানে দেখা যায় পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প করে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে। প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে দুজন মারা যাওয়ারও তথ্য পাওয়া গেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যাদের পাহাড়ে নেওয়া হচ্ছে, তাদের এ ভিডিও দেখে প্রশিক্ষণের প্রাথমিক ধারণা দিতেই তা বানানো হয়েছে। ভিডিওর শুরুতে সংগঠনটির প্রধান আনিসুর রহমানকে দেখা যায়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে তার বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। একের পর এক সাঁড়াশি অভিযানে পাহাড়ে কয়েকজন আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় গা-ঢাকা দিয়েছে বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন।