বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ছাত্র সংসদ নেই তবু ফি আদায়

চট্টগ্রামে কলেজ শিক্ষার্থীদের টাকার গন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি ওমরগণি এমইএস কলেজের সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ২০০০ সালে। প্রতি ২ বছর পর পর ছাত্র সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় দুই যুগ ধরেই চলছে ওই ছাত্র সংসদের মেয়াদ কাল! বর্তমানে ছাত্র সংসদের তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে না পড়লেও প্রতিবছর ছাত্র সংসদের নাম করে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের গুনতে হয় ২০০ টাকা। প্রতি বছর ছাত্র সংসদের নামে লাখ লাখ টাকা নেওয়া হলেও হদিস নেই সেই টাকার। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া ফি কোন খাতে ব্যয় করা হয় তা জানেন না খোদ কলেজ ছাত্র সংসদের সভাপতিও। শুধু এমইএস কলেজ নয় চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, সরকারি কমার্স কলেজ, সরকারি সিটি কলেজের অভিন্ন চিত্র। ব্যতিক্রম শুধু ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। অনুসন্ধানে জানা যায়, ওমরগণি এমইএস কলেজে প্রতি বছর এইচএসসি ও ডিগ্রিতে ভর্তি হয় প্রায় ২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী। তাদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে ছাত্র সংসদ ফি নেওয়া হয়। সে হিসেবে প্রতি বছর সাধারণ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা। বিগত ১২ বছরে ছাত্র সংসদ ফি বাবদ ছাত্রদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৬০ লাখ টাকা।

ওমরগণি এমইএস কলেজের অধ্যক্ষ আ ন ম সরোয়ার আলম বলেন, কলেজ ছাত্র সংসদের যে ফি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় সে টাকা সংসদের কাছেই থাকে। তারা শিক্ষার্থীদের জন্যই তা খরচ করে বলে জানি। তবে কোন খাতে এই টাকা শিক্ষার্থীদের জন্য খরচ করে তা জানাতে পারেননি তিনি। তবে ব্যতিক্রম নগরীর ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। এ কলেজে ছাত্রদের নির্বাচিত ছাত্র সংসদ না থাকার কারণে ২০১৬-১৭ সালের পর থেকে ছাত্র সংসদ বাবদ কোন ফি নেওয়া হয় না। এ কলেজে এইচএসসি, ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্স মিলে প্রায় শিক্ষার্থী রয়েছে ১ হাজার ৯৭০ জন। তবে কলেজ ফান্ড থেকে নানা সময়ে কলেজ শিক্ষার্থীদের নানা আয়োজনে সহযোগিতা করা হয় বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ মোস্তফা মোরশেদ। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কলেজ ছাত্র সংসদের কোনো টাকা নেওয়া হয় না। নির্বাচিত কমিটি না থাকলেও এডহক কমিটির কার্যক্রম চলছে। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে প্রতি বছর এইচএসসিতে ১ হাজার ৫০ জন, ডিগ্রিতে ২৫০ জন ও অনার্সে ১ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীসহ মোট ৩ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ভর্তির সময় অন্যান্য ফির সঙ্গে ছাত্র সংসদ ফি নেওয়া হয় ২৫ টাকা করে। সে হিসেবে ৩ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে আদায় করা হয় ৭৫ হাজার টাকা। ৩৮ বছর ধরে এই কলেজে নেই ছাত্র সংসদ। সে হিসেবে প্রতি বছর ৭৫ হাজার টাকা করে ৩৮ বছরে প্রায় ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা হয়েছে। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এস এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের নতুন যে সব শিক্ষার্থী ভর্তি হয় তাদের কাছ থেকে ছাত্র সংসদ ফি নেওয়া হয় তা সত্য। তবে তা কেউ কোনোভাবে খরচ করতে পারে না। সে ফি ছাত্র সংসদের নামে যে ব্যাংক একাউন্ট আছে তাতে জমা হচ্ছে। ছাত্র সংসদ না হওয়া পর্যন্ত তা কেউ উত্তোলন করতে পারবে না।

চট্টগ্রাম সিটি কলেজে এইচএসসির দিবা ও নৈশ শাখায় প্রতি বছর ভর্তি হয় ২ হাজার ১৪৯ জন। ছাত্র সংসদ ফি বাবদ প্রতি বছর ২৫ টাকা করে এক বছরে আদায় হয় ৫৩ হাজার ৭২৫ টাকা। ১৯৮৪ সাল থেকে নেই নির্বাচিত ছাত্র সংসদ। গত দুই দশকে হিসাব করলে ছাত্র সংসদ ফি বাবদ আদায় হয়েছে ১০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এটা শুধুমাত্র এইচএসসি শিক্ষা বর্ষের হিসাব।

সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ সুদীপা দত্ত বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ছাত্র সংসদের কোনো টাকা খরচ করা হয়নি। ছাত্ররা যে টাকা ব্যাংকে জমা করেছেন, তাই আছে। এখানে ছাত্র সংসদ না থাকলে টাকা কেউ খরচ করতে পারবে না। তবে নতুন এডহক কমিটির পর আমাদের ছাত্র সংসদ আছে, সেখানে কিছু আসবাবপত্র নেওয়ার জন্য তারা দাবি তুলেছে। আমরা বিষয়টি বিবেচনা করে তারপরই অনুমোদন দিব। তবে সংসদের ব্যাংক হিসাবে কত টাকা জমা আছে তার সঠিক তথ্য দিতে পারেননি তিনি।

চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজে প্রতি বছর এইচএসসিতে ৯৩০ জন, ডিগ্রিতে ৯০০ জন ও অনার্সে ৬৫০ জন শিক্ষার্থী হয় ভর্তি হয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আদায় করা হয় ২০ টাকা করে। কিন্তু ১৯৯৬-৯৭ সালে এ কলেজে সর্বশেষ ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়েছে। প্রতি বছর ২ হাজার ৪৮০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আদায় করা হয় ৪৯ হাজার ৬০০ টাকা। ২৩ বছরে তার পরিমাণ হয় ১১ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু ছাত্র সংসদের এই টাকা চলে যায় কলেজের রাজনৈতিক দলের নেতাদের হাতেই।

বিষয়টি স্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ সুসেন বড়ুয়া জানান, নিয়মিত টাকা নেওয়া হয় ঠিক আছে কলেজ ছাত্র সংসদ না থাকলেও কলেজ ক্যাম্পাসে যারা রাজনীতি করে তাদের বিভিন্ন দিবসে খরচের টাকা দেওয়া হয়। তবে কয় টাকা দেওয়া বছরে তার কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি। বরং বললেন, পরিস্থিতির কারণে এসব বলা যাবে না। এসব বাদ দিয়ে অন্য বিষয়ে কথা বলেন।

সর্বশেষ খবর