বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

দখল-দূষণের কবলে করতোয়া

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া

দখল-দূষণের কবলে করতোয়া

দখল ও দূষণে একাকার বগুড়ার করতোয়া নদী। এবার নদীর তলদেশ থেকে সুউচ্চ ভবন তৈরি করা হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুম থাকায় বিনা বাঁধায় নদীতে একাধিক ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ভবনটি নির্মাণ শেষ হলে সেটি বাণিজ্যিক মার্কেট করার পরিকল্পনা করছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। জানা যায়, বগুড়া জেলার এক সময়ের প্রমত্তা নদী ছিল করতোয়া। নদীটি আদিকাল থেকে দখল, দূষণ শুরু হয়ে কালে কালে সেটির কার্যক্রম চলতে থাকে। বর্তমানে নদীটির তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বগুড়া অঞ্চলে সেটি এখন নামেই নদী হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে। জেলা শহরের সবচেয়ে বড় ড্রেন বললেও ভুল হবে না। আর ড্রেন হওয়ার সুযোগে ইচ্ছেমতো দখল শুরু করে উচ্চ, সুউচ্চ, ভবন, টিনশেড বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। কোথাও কোথাও আবার নদীর মধ্যেই সীমানা প্রাচীর দিয়ে দখল করে ভবন তৈরি করছে। ইচ্ছেমতো দখল দূষণে মরে গেছে করতোয়া নদী। ঢেউ নেই, পানি নেই, পাড় নেই। এসবের বদলে আছে নদীর পাড়ে সুউচ্চ ভবন, অবৈধ দখলদার, বাড়িঘর, অবৈধ স্থাপনা, নদীর বুকে ময়লা আর শহরের বর্জ্য নদীতে ফেলার সহস্র ড্রেনেজ ব্যবস্থা। পানি দূষণ হওয়ার কারণে মাছও নেই। জেলা শহরের চেলোপাড়া, উত্তর চেলোপাড়া, মালতীনগর, ফুলবাড়ি, মাটিডালি, রাজাবাজার, ফতেহ আলী ব্রিজ, মহাস্থানগড় এলাকায় দখলের হার সবেচেয়ে বেশি। উল্লেখিত এলাকায় দখল প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আর এবার নতুন করে মাটিডালি বেইলি সেতুর পাশে করতোয়া নদীর তলদেশ থেকে দুটি ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। একটি ভবন দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত কাজ চলছে অপর একটি ভবনের নিচতলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। এই ভবন দুটি নির্মাণকালে কোনো বাঁধা না থাকায় আশপাশের বেশ কিছু যুবক নদীর অন্যান্য পাড়ও দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছে। এলাকাবাসী বলছে, অবৈধ ভবন দুটির মালিক স্থানীয় কিছু যুবকদের সার্বক্ষণিক পাহারা বসিয়ে নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে। নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেলেও প্রশাসন থেকে নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। যে কারণে আরও দ্রুতগতিতে কাজ করে যাচ্ছে অবৈধ ভবন নির্মাণে। সেখানে কোনো ছবি তোলা বা সেলফি তোলা দেখলে যুবকরা লাঠি হাতে এগিয়ে আসেন। যেন ভবন নির্মাণের ঘটনাটি ফাঁস না হয়। জেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়, প্রায় ১৮০ কিলোমিটার করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে প্রাচীন পুন্ড্রনগরীর গোড়া পত্তন হলেও সেই সভ্যতার সঙ্গে এখন করতোয়া নদীও ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিতে চলেছে। করতোয়া নদী বগুড়া শহরের বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে জেলার শেরপুর উপজেলার চান্দাইকোনায় বাঙালি নদীতে গিয়ে মিলেছে। উৎপত্তিস্থল থেকে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮০ কিলোমিটার। এরমধ্যে দূষণ, দখল, ভরাট, পানি প্রবাহ না থাকায় এখন মরা নদী হিসেবে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ১৯৮৮ সালে বন্যার সময় তৎকালীন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে গাইবান্ধার গোাবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরের খুলশি চাঁদপুর এলাকায় বাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণের মাধ্যমে করতোয়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। সে সময় ওই অংশে করতোয়ার মূল স্রোত একটি শাখা নদীর মাধ্যমে বাঙালি নদীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এতে গোবিন্দগঞ্জ থেকে বগুড়ার দিকে করতোয়া নদীর প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে দিনে দিনে সরু খালে পরিণত হয়। একদিকে পানি শূন্যতায় প্রবাহ বন্ধ, অন্যদিকে ভরাট আর দখলের ফলে নদীটি এখন মৃত। করতোয়া নদীটি শহরের  ভিতরের অংশে যে যেখানে পেরেছে দখল ও ভবন নির্মাণ করেছে। শুষ্ক মৌসুমে এই দখলের প্রক্রিয়া বেশি হয়ে থাকে। করতোয়া নদীতে দুই একটি স্থানে পানি দেখা গেলেও শহর ও শহরতলীর প্রায় ২০ কিলোমিটারে শুধু ড্রেনের কালো পানি বয়ে যায়। দখল করা নদীর পাশে নির্মাণ করা হয়েছে শত শত বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিশাল বিশাল ভবন। সময় সুযোগমতো প্রভাবশালীরা নামে-বেনামে নদীর তীর দখল করে নিচ্ছে। বগুড়া শহরের নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, নদীর পাড় দখল হয়ে আছে স্বাধীনতার আগে থেকেই। কেউ ড্রেন করেছে। কেউ করেছে বাড়ি। এরছাড়া পৌরসভার বড়বড় ড্রেনেজ ব্যবস্থাও করা হয়েছে করতোয়া নদীতে। যে কারণে শহর এলাকার এই নদীতে আর মাছ পাওয়া যায় না।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর