সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

আড়াই বছর পর ব্যবসায়ী মুন্না হত্যার রহস্য উদঘাটন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সার্জিক্যাল ব্যবসায়ী ইয়াছিন আলী মুন্না (৬০) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রায় আড়াই বছর পর জানা গেছে যে- মুন্না ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হয়েছেন। হত্যাকান্ডে জড়িত অভিযুক্ত কবির হোসেনকে (৫০) গ্রেফতার করা হয়েছে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার এসব জানান। পিবিআইয়ের তদন্ত

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সার্জিক্যাল ব্যবসায়ী ইয়াছিন আলী মুন্না হত্যাকান্ডে  জড়িত কবিরকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী মুন্নাকে হত্যার সময় ব্যবহৃত ২টি সিএনজি জব্দ করা হয়। গ্রেফতার হওয়া কবির আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুন্না সার্জিক্যাল ব্যবসায়ী। তিনি মোহাম্মদপুরের মিরপুর রোডে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অপর একটি রুমে থাকতেন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মুন্না তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় যান এবং পরদিন দুপুরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাত ১১টার দিকে বড় বোন মুন্নার মোবাইল নম্বরে ফোন করে কোনো সাড়া পাননি। পরে ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ২টায় শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ মুন্নার মোবাইল ফোন থেকে তার বড় বোনের মোবাইলে ফোন করে জানায়, মুন্নার লাশ শেরেবাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল গেটের অনুমান ৩০ গজ উত্তরে রাস্তার পাশে থাকা ময়লার স্তূপের পাশে পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে স্বজনরা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা লাশ শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় মুন্নার বড় বোন জামাই একেএম আমানুল্লাহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।

পিবিআই জানায়, মামলাটি প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ তদন্ত করে। প্রায় ২ মাস পর ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) মামলাটির তদন্ত শুরু করে। তদন্তের সময় একই ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনায় ২০২০ সালের জুলাইতে শেরেবাংলা নগর থানায় আরেকটি মামলা হয়। মামলাটি শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ তদন্ত করে এবং পরে হওয়া মামলার আসামি আসাদ শেখ (৫৩), দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার ওরফে দেলু (৪০), জলিল সিকদার (৪৩) এবং মিজানুর রহমান সরদার ওরফে মিজানকে (৪০) গ্রেফতার করে। এদের ডিবি পুলিশ মুন্না হত্যাকান্ডে  করা মামলায় গ্রেফতার দেখায়। প্রায় ১০ মাস ডিবি পুলিশ তদন্তের পর পুলিশ সদর দফতরের আদেশে ২০২০ সালের ২ নভেম্বর মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করে। গ্রেফতার ৪ জন আসামি পিবিআই মামলা গ্রহণের আগেই জামিন পান।

অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মামলা?টি তদন্তকালে জানা যায়- মুন্না বগুড়া থেকে ঢাকার গাবতলীতে পৌঁছানোর পর বাসায় যাওয়ার জন্য রাত ৯ টায় ডিবির হাতে আগেই গ্রেফতার হওয়া ড্রাইভার আসাদ শেখের সিএনজিতে উঠেন। সিএনজিটি হঠাৎ শ্যামলী ক্রসিংয়ের আগে বাম পাশে ফাঁকা জায়গাতে থামে। সিএনজি নষ্টের কথা বলে আসাদ শেখ যাত্রী মুন্নাকে অপেক্ষা করতে বলেন। পিছনের সিএনজিতে থাকা মামলার অপর আসামি ও আগে ডিবির হাতে গ্রেফতার দেলু, জলিল এবং মিজান জোর করে ড্রাইভার আসাদ শেখের সিএনজিতে উঠেন। আসাদ শেখ সিএনজিটি চালিয়ে যেতে থাকেন। তখন পিছনে থাকা সিএনজিটি আসামি কবির হোসেন চালিয়ে পিছনে পিছনে যান। পরে সিএনজি দুটি বিভিন্ন জায়গায়  ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে শেরেবাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল গেটের অনুমান ৩০ গজ উত্তরে রাস্তার পাশে থাকা ময়লার স্তূপের পাশে একত্র হয়। এরপর তারা মুন্নাকে মারধর করেন। তার গলা ও মুখ চেপে ধরে টাকা-পয়সা, গলায় থাকা মোটা স্বর্ণের চেনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। এরপর তারা মুন্নাকে এবং তার মোবাইল ফোনটি ঘটনাস্থলে ফেলে পালিয়ে যান।

আসাদ শেখ, দেলু, জলিল সিকদার এবং মিজান দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় সিএনজি দিয়ে ছিনতাই করেছিলেন। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর