শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ অবকাঠামো

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বিপ্লব আনবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহুমাত্রিক যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন দুই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। বাড়বে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য। কমবে আমদানি-রপ্তানি ব্যয়। বাড়বে রাজস্ব আহরণ। ভৌগোলিক সুবিধা নিয়ে একে অন্যের বন্দর ব্যবহার করে সহজে আমদানি-রপ্তানি করতে পারবে। এতে দুই দেশেরই জাতীয় আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি হবে। গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশন যৌথভাবে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ভারত ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক ওই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তারসহ দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মুক্ত আলোচনায় সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক সোবহান, ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, আসিফ ইব্রাহীম, মো. সবুর খান, শামস মাহমুদ, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি আনিস উদ-দৌলা, ঢাকা চেম্বারের পরিচালক মালিক তালহা ইসমাইল বারী, খায়রুল মজিদ মাহমুদ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। ড. মসিউর রহমান বলেন, দুই দেশের রেল যোগাযোগ উন্নয়নে যমুনা রেলসেতু স্থাপনসহ বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে, যা সম্পন্ন হলে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে প্রভূত উন্নয়ন পরিলক্ষিত হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে সহজতর করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ কাজে লাগিয়ে ভারতীয়রা এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। এ ছাড়া দুই দেশের বাণিজ্য স্থানীয় মুদ্রায় করা যেতে পারে। তিনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাশাপাশি অন্যান্য প্রদেশে বিনিয়োগ ও পণ্য রপ্তানিতে মনোযোগী হতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট রপ্তানিতে আরোপিত এন্টি-ডাম্পিং ডিউটির ফলে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এই সংকট নিরসনে ভারত সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়া আরও সহজীকরণের ওপরও জোর দেন ড. মসিউর রহমান। ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন। এই সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেবে আন্তদেশীয় যোগাযোগ। বাংলাদেশ ও ভারতের ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা পুরোপুরি ভোগ করতে দুই দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি। তিনি বলেন, ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় হ্রাসকল্পে আধুনিক সড়ক, রেল ও নদীপথের যোগাযোগ অবকাঠামো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে ৭টি ‘ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন’ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে, যা সম্পন্ন হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও সহজতর হবে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ৭টি স্থানে ‘বর্ডার হাট’ পরিচালনার মাধ্যম স্থানীয় উদ্যোক্তারা সহজেই পণ্য রপ্তানিতে সক্ষম হয়েছেন। আগামীতে বর্ডার হাট কার্যক্রম আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা অন্যান্য দেশে পণ্য রপ্তানিতে কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারেন বলে জানান হাইকমিশনার।

অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, ২০২২ অর্থবছরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শুল্কবহির্ভূত যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।

দুই দেশের রয়েছে পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম সীমান্ত। এমতাবস্থায় সীমান্ত এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারিত হলে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী দুই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় আয় যথাক্রমে ১৭% ও ৮% বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

সেমিনারে ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দুই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ, ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্র ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন। তারা বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গত পাঁচ বছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দ্বিগুণ বেড়েছে। গত তিন বছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে, যা আশাব্যঞ্জক। বাংলাদেশের রেলওয়ে খাতের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভারত সরকার বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার সুফল শিগগিরই পাওয়া যাবে। প্রস্তাবিত ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ পাইপলাইন’ চালু হলে প্রতি বছর প্রায় ১ মিলিয়ন মেট্রিক টন ডিজেল পরিবহন সম্ভব হবে, যা বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মুক্ত আলোচনায় সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক সোবহান, ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, আসিফ ইব্রাহীম, মো. সবুর খান, শামস মাহমুদ, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি আনিস উদ-দৌলা, ঢাকা চেম্বারের পরিচালক মালিক তালহা ইসমাইল বারী, খায়রুল মজিদ মাহমুদ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, প্রস্তাবিত কম্প্রিহেনসিভ প্রিফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (সেপা) চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের কাঁচা পাট রপ্তানির ওপর এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারসহ দুই দেশের শুল্ক ও প্যারা-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতার নিরসন হবে, যা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ত্বরান্তিত করবে। আলোচকবৃন্দ বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি খাতে ভারতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ও বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের ভারতের ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়া আরও সহজতর করতে ভারতীয় হাইকমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর