খুলনা নগরীতে ওয়াসার ২৩৩৪ কোটি টাকার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে চলমান কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি, ম্যানহোল তৈরি ও পাইপ বসানো কাজে ধীরগতি এবং পরবর্তী সময়ে সংস্কার কাজের ঝুঁকি এড়াতে ডিজাইনে টেকনিক্যাল দিক যাচাইয়ের জন্য নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে সংস্কারের সময় সড়কের কোনো অংশ যাতে বসে না যায় সে জন্য এলজিইডি ও সড়ক বিভাগের মতামত নেওয়া হয়েছে। গতকাল সিটি করপোরেশনে সমন্বয় বৈঠকে টেকনিক্যাল দিক নিয়ে আলোচনা হয়। সিটি করপোরেশনের চিফ প্ল্যানিং অফিসার আবির উল জব্বার বলেন, পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে ওয়াসার একটি রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি, ম্যানহোল তৈরিতে এক বছরের বেশি সময় লাগছে। অনেক স্থানে পুরো রাস্তাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন ফুটপাত ও ড্রেন নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া যেভাবে ম্যানহোল তৈরি করা হয়েছে, ভবিষ্যতে রাস্তা সংস্কারের সময় তা ভেঙে যেতে পারে কিংবা রাস্তার ওই অংশ দেবে (বসে) যেতে পারে। এতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হবে ও কেসিসি বিপাকে পড়বে। এসব কারণে ডিজাইনে টেকনিক্যাল দিক যাচাই করতে ওয়াসার কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তাদের দাফতরিক চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে কাজ বন্ধ রাখার চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে খুলনা ওয়াসার প্রকল্প ব্যবস্থাপক খান সেলিম আহম্মদ জানান, সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি, ম্যানহোল তৈরির কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে মির্জাপুর ইউসুপ রো রোড, দারোগাপাড়া ও ট্যাংক রোডে ম্যানহোল তৈরির জন্য কয়েকটি গর্ত করা হয়েছে। ওইসব গর্ত অরক্ষিত অবস্থায় থাকলে জনগণের দুর্ভোগ বাড়বে। এক সপ্তাহ সময় পেলে ওই কাজগুলো শেষ হয়ে যাবে। বিষয়টি সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলেছে। তবে নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি বা ম্যানহোল তৈরির কাজ বন্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, এর মধ্যে নগরীর শেখপাড়া রোড, আহসান আহমেদ রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, টিবি ক্রস রোড ও সামছুর রহমান রোডের ম্যানহোলের নির্মাণ শেষ হয়েছে। ডিজাইন অনুযায়ী দক্ষতার সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছে, রাস্তা সংস্কারের সময় এটি ভেঙে পড়ার কোনো কারণ নেই। কর্মকর্তারা জানান, অনেক সময় কালভার্ট বা ব্রিজ নির্মাণের পর সংযুক্ত রাস্তা ব্যবহারের কিছুদিনের মধ্যে বসে যায়। এক্ষেত্রে ম্যানহোলের চারপাশের জায়গা বসে যাওয়ার আশঙ্কা আছে কি না যাচাই করা হচ্ছে।
খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, ম্যানহোল নির্মাণকাজে টেকনিক্যাল কোনো সমস্যা নেই। সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে এলজিইডি ও সড়ক বিভাগে টেকনিক্যাল মতামত চেয়েছে। তারাও সুস্পষ্টভাবে বলেছে, আগে যেসব জায়গায় এ ধরনের কাজ হয়েছে কোথাও সমস্যা হয়নি। সড়কে যেখানে ম্যানহোল থাকবে সংস্কারের সময় সেখানে বিগ রোলার যাবে না। সেখানে কম্প্যাক্টর রোলার (ছোট আকারের রোলার) দিয়ে সংস্কার কাজ করা হবে।
জানা যায়, গত বছর সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। ওয়াসার তথ্য মতে, অধিকাংশ বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে পানি বাড়ির পাশের ছোট ড্রেন, সেখান থেকে বড় ড্রেন, এরপর খাল দিয়ে নদীতে চলে যায়। এসব বর্জ্য ড্রেনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দূষিত করছে নগরী এবং পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী ও খাল। বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে এ প্রকল্প নেয় ওয়াসা।