বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিরোধিতার মধ্যে সম্পূরক বাজেট পাস

বস্তিবাসীর জন্য হচ্ছে ১০০১টি ফ্ল্যাট

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের বিরোধিতার মুখে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সম্পুরক বাজেট পাস হয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পুরক) বিল-২০২৩’ পাসের মাধ্যমে সম্পুরক বাজেট পাস হয়। এ বাজেট পাসের মধ্য দিয়ে সংসদ ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অতিরিক্ত ১৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমতি দিয়েছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে সম্পুরক বাজেটের অর্থ অনুমোদনের জন্য ৫৪টি মঞ্জুরি দাবির ওপর ১৬৩টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে তিনটি দাবির ওপর আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। এগুলো হচ্ছে- জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। বাকি মঞ্জুরি দাবিগুলো সরাসরি ভোটে দেওয়া হয়। অবশ্য সব ছাঁটাই প্রস্তাবগুলোই কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পুরক) বিল-২০২৩’ সংসদে উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

 

সংসদ অধিবেশনে মন্ত্রীদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অতিরিক্ত বরাদ্দের দাবি উত্থাপন করেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের অনুপস্থিতিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দাবিটি তিনি উত্থাপন করেন। কণ্ঠভোটে সে প্রস্তাব গৃহীত হয়।

সম্পুরক বাজেটের আওতায় ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিপরীতে ১৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে সর্বাধিক ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৪১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে। এর পরই রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ বিভাগকে ৩ হাজার ৪৯১ কোটি ৯৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়। তৃতীয় সর্বোচ্চ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে ৩ হাজার ৩৫৯ কোটি ২৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়া হয়। সবচেয়ে কম ২৪ কোটি ৭৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এ ছাড়া বরাদ্দ অনুমোদন পাওয়া অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে- আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৫০৪ কোটি ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা, পরিকল্পনা বিভাগ ২ হাজার ২৪৭ কোটি ৮৪ লাখ ৬ হাজার টাকা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১১২ কোটি ৫ লাখ ১১ হাজার টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ১১৩ কোটি ১৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৮৭৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ২৭৬ কোটি ৮৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৭০৭ কোটি ৬২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৩৫২ কোটি ৭৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয় ৭০১ কোটি ৩২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ৪ হাজার টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয় ২ হাজার ৮৮৬ কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৫৩৫ কোটি ৮ লাখ ৩৯ হাজার টাকা, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ৫৫১ কোটি ৬১ লাখ ৯১ হাজার টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৬২ কোটি ৮৬ লাখ ২৮ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগ ১ হাজার ১১৩ কোটি ৪০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৭৭ কোটি ৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারেনি তাদের হ্রাসকৃত বরাদ্দের জন্য সংসদের অনুমতির কোনো প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে কেবল তাদের বরাদ্দই সংসদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংসদে এ সম্পুরক বাজেট পাস হয়।

রাজধানীতে বস্তিবাসীর জন্য ১০০১টি ফ্ল্যাট হচ্ছে : গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ জানিয়েছেন, রাজধানীসহ প্রধান প্রধান শহরের বস্তিতে জীবিকার তাগিদে মানবেতরভাবে বসবাস করা প্রান্তিক ও স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীকে ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাটে বসবাসের ব্যবস্থা করছে বর্তমান সরকার। এ প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে রাজধানী ঢাকায় বস্তিবাসীদের জন্য ১ হাজার ১টি ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। গতকাল জাতীয় সংসদে লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। সরকারি দলের মো. শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, বস্তিবাসীর জন্য ১ হাজার ১টি ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট তৈরির অংশ হিসেবে প্রথমে মিরপুর-১১ নং সেকশনে ৫৩৩টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের ৩ আগস্ট এ প্রকল্পের ৩০০টি ফ্ল্যাটের বরাদ্দপত্র ৩০০ বস্তিবাসী পরিবারের  মধ্যে হস্তান্তর করেন। চলতি বছর ওই প্রকল্পের অবশিষ্ট ২৩৩টি ফ্ল্যাট বস্তিবাসী পরিবারের মধ্যে বরাদ্দপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

একই প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকারের ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের আবাসন নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ এবং প্লট উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে।

 

 ওই সকল প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।

গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ব্যবহার-সংক্রান্ত নীতিমালা : গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ব্যবহার-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংসদ কার্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সংসদে সরকারি দলের সদস্য এম. আবদুল লতিফের লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, গাড়িতে জাতীয় পতাকা এবং সরকারি মনোগ্রাম বা প্রতীক ব্যবহার-সংক্রান্ত ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল এনথিম, ফ্ল্যাগ অ্যান্ড এমব্ল্যাম অর্ডার, ১৯৭২’ রয়েছে। বিদ্যমান ওই আইনে এতদসংক্রান্ত অপরাধের জন্য ১ বছরের কারাদ  বা ৫ হাজার টাকা অর্থদ  অথবা উভয় দে  দি ত করার বিধান রয়েছে।

সরকারি দলের সদস্য মনজুর হোসেনের প্রশ্নের জবাবে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, সমাজসেবা অধিদফতরের প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচির ডিজেবিলিটি ইনফরমেশন সিস্টেম (ডিআইএস) ডাটাবেইজে সংরক্ষিত তথ্য অনুযায়ী দেশে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ৭৮ হাজার ৮৯০ জন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর