কোরবানির ঈদের আর মাত্র চার দিন বাকি। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমে উঠেছে পশুর হাট। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- নেত্রকোনা : জমে উঠেছে নেত্রকোনায় পশুর হাট। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকটি করে হাট বসছে। ৮৬ ইউনিয়নের বিপরীতে ২ শতাধিক হাটের খবর পাওয়া গেলেও ভিন্ন ভিন্ন তথ্য মিলছে এ সংখ্যার। আবার অনেক বাজারে স্থানীয় প্রশাসনই খাস কালেকশন করছে। জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী ১০ উপজেলার ৮৬ ইউনিয়নে অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে ১৭৪টি। তবে স্থায়ী হাটের সংখ্যা ৪৪। বারহাট্টা উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট নৈহাটি বাজার। ঐতিহ্যবাহী এ পশুর হাটে প্রতি কোরবানির ঈদে শতকোটি টাকার বেচাকেনা হয়। চলতি সপ্তাহে কয়েক শ কোটি টাকার পশু বিক্রির আশা সংশ্লিষ্টদের। এ বাজারে মাত্র ৪০০ টাকার রসিদেই বেচাকেনা হয় লাখ টাকার গরু। প্রতি সপ্তাহে কয়েক হাজার পশু বেচাকেনা হলেও কোরবানি ঈদে বিক্রি হয় লাখো পশু। এ বাজারে সুনামগঞ্জ থেকেও পশু আসে। দীর্ঘদিন স্থানীয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টোল আদায় হলেও ৫ আগস্টের পর থেকে কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করছে স্থানীয় প্রশাসন। মাত্র ১০ মাসে প্রায় ২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এদিকে আটপাড়া তেলিগাতী পুরনো বাজার নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও ইজারাদারদের ঝামেলায় বাজারটি জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্থানীয়ভাবে খাস কালেকশনে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, জেলায় এবার ১৭৪টি অস্থায়ী হাট দেওয়া হয়েছে। খাস কালেকশনে কোনো ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
ঠাকুরগাঁও : কোরবানির ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ঠাকুরগাঁওয়ের হাটবাজারগুলোয় ততই বাড়ছে কোরবানির পশু কেনাবেচার ব্যস্ততা। তবে বাজারে দেখা দিয়েছে এক ধরনের বৈপরীত্য। ক্রেতারা তুলনামূলক কম দামে গরু কিনে সন্তুষ্ট হলেও বিক্রেতা ও খামারিরা বলছেন, উৎপাদন খরচই উঠছে না, উল্টো লোকসান গুনতে হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাঙ্গী, রাণীশংকৈল, হরিপুরসহ জেলার বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশি গরুর সরবরাহ ভালো। অনেক খামারি তাদের খামারে পালিত গরু বিক্রির জন্য হাটে এনেছেন। কিন্তু আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় তাঁরা হতাশ। সাধারণ ক্রেতা ও অন্যান্য জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা জানান, এবারে গরুর দাম তুলনামূলক কম ও সহনীয়। ঠাকুরগাঁও রোড এলাকার আবু সালেক বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা কম। মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি।’ আবদুস সোবহান নামে একজন ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে থার্ড পার্টির দৌরাত্ম্য বেশি। তার পরও এবার আমি যে বাজেট নিয়ে এসেছিলাম, তাতে গরু কিনতে পেরেছি। গত বছর যে গরুর দাম ছিল ১ লাখ থেকে ৯০ হাজার, এবার সেই গরু ৭০-৭৫ হাজারে পাওয়া যাচ্ছে।’ চট্টগ্রামের হালিশহর থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী নূর ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রতি বছর ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন হাট থেকে গরু কিনি। এবারও এসেছি এবং তুলনামূলক কম দামে গরু পাচ্ছি।’ বড় খোঁচাবাড়ী হাটে আসা গরু ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ‘এবার ভারতীয় গরু নেই, তার পরও দেশি গরুর দাম কম। প্রচুর গরু এসেছে, কিন্তু ক্রেতা নেই। গ্রামের গরুগুলো এখনো বাজারে ওঠেনি, উঠলে দাম আরও কমে যাবে।’ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইজহার আহমেদ খান বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে কোরবানির পশুর চাহিদা ৭৫ হাজার, প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় ৯১ হাজার পশু। চাহিদার তুলনায় প্রায় ১৬ হাজার বেশি। জেলার প্রতিটি হাটে ভেটেরিনারি টিম মোতায়েন করা হয়েছে। গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।’
এদিকে হাটের নিরাপত্তা, জাল টাকা শনাক্ত, অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে। ঠাকুরগাঁও সদর ইউএনও খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘৪০টি হাটের ইজারাদারদের নির্ধারিত ফির বাইরে টোল না নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। কোনো ব্যত্যয় হলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সড়কে ছিনতাই ও ডাকাতি ঠেকাতে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।’