আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট ৩৯ হাজার ৬২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা জিডিপির ৯ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। সেই হিসেবে এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা। গতকাল ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ তথ্য তুলে ধরেন। বাজেট বক্তব্যে কৃষির বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষির ফলন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিকূল পরিবেশসহিষ্ণু জাত ও উন্নততর চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন, সুলভ মূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ, সেচ এলাকা সম্প্রসারণ, বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে সার আমদানি এবং দেশে ইউরিয়া সার উৎপাদন বাবদ প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
উৎপাদিত কৃষিপণ্যের অপচয় রোধ করাসহ সার্বিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে প্যাকেজিংসহ হিমাগার ও কোল্ড চেইন কাঠামো শক্তিশালীকরণ, কৃষিপণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষিপণ্যের সাপ্লাই চেইনের সব অংশীজনের একটি পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেজ তৈরি করা, বিশেষায়িত কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খোলা বাজার (ওএমএস) এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলমান রয়েছে। বর্তমানে ১ হাজার ৯০১টি কেন্দ্রের মাধ্যমে সারা দেশে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তালিকাভুক্ত চা শ্রমিকদের মাঝে প্রতি কেজি গম ১৯ টাকা দরে বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট’ কর্মসূচির আওতায় ১০ লাখ ৪০ হাজার দুস্থ নারীকে মাসে ৩০ কেজি হারে চাল দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া আগামী অর্থবছরে খাদ্য গুদামের ধারণক্ষমতা ৩৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীতকরণ এবং খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত নিয়ে বাজেট বক্তব্যে বলা হয়, দেশের ক্রমবর্ধমান নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে মৎস্য এবং গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির টেকসই জাত উন্নয়ন এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড এগ্রিকালচার ২০২৪’ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় এবং বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা মাছ উৎপাদনে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। মিঠা পানির মাছ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৯ মে থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত হাওর এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রাখার জন্য সরকারি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সামুদ্রিক জলসীমায় ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা বিবেচনায় রেখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫২ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।