সুপ্রিম কোর্টের পাশাপাশি সারা দেশের আদালতগুলোতে সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগে পৃথক দুুটি শাখা নিয়ে গঠন করা হচ্ছে সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস। এ লক্ষ্যে একটি অধ্যাদেশের খসড়াও প্রস্তুত করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্ট অ্যাটর্নি শাখার আইন কর্মকর্তারা উচ্চ আদালতে এবং জেলা অ্যাটর্নি শাখার আইন কর্মকর্তারা মামলা পরিচালনা করবেন জেলা আদালতে। এসব আইন কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পরীক্ষায় বসতে হবে প্রত্যাশীদের। পাশাপাশি ৩০ শতাংশ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুযোগও রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত এ অধ্যাদেশে।
এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, বিচার বিভাগের আকাক্সক্ষাগুলোর মধ্যে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিসের কথা খুব বেশি শুনতাম। এ বিষয়টি অনেক বছর ধরেই আলোচনায় ছিল। ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অধ্যাদেশও করেছিল। কিন্তু পরবর্তী সরকার এসে ওই অধ্যাদেশটি আর আইন করেনি। তিনি বলেন, কেন সেই অধ্যাদেশটি টেকেনি, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে আমরা দেখলাম, ওই অধ্যাদেশটা একটু বেশিই অ্যাম্বিশাস ছিল। তিনি আরও বলেন, যে কোনো বিষয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ লাগে। আমাদের মতো দেশে হঠাৎ করেই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ জিরো করে দেব আর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এসে সেটা গ্রহণ করবে, সেটা অবাস্তব। আমরা যদি ধাপে ধাপে সংস্কার করি, সেটা ভালো হয়। এ জন্যই চুক্তিভিত্তির নিয়োগের সুযোগটা রাখা হয়েছে।
খসড়া অধ্যাদেশে সুপ্রিম কোর্ট অ্যাটর্নি শাখায় প্রবেশের প্রথম ধাপ রাখা হয়েছে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল। এ পদে প্রবেশের যোগ্যতা হিসেবে খসড়ায় বলা হয়েছে, ৫০ শতাংশ পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সিজিপিএ ৩-সহ চার বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) অথবা স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর থাকতে হবে। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে পাঁচ বছর। খসড়ায় বলা হয়েছে, ২০ শতাংশ পদ পূরণ করতে হবে জেলা অ্যাটর্নি শাখা থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে। সে ক্ষেত্রে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ পেতে ডেপুটি জেলা অ্যাটর্নি পদে কমপক্ষে পাঁচ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে প্রার্থীর। ৩০ শতাংশ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের যোগ্যতায় খসড়ায় বলা হয়েছে, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে প্রার্থীর সাত বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে কমপক্ষে সাত বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত বা ইস্তফা প্রদান করা বিচারক যদি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন, তাহলে তিনিও এ পদের যোগ্য হবেন। খসড়ায় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদেও একইভাবে ৫০ শতাংশ সরাসরি, ২০ শতাংশ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বা জেলা অ্যাটর্নি থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩০ শতাংশ পদ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
তবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদে সরাসরি নিয়োগের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। এই পদে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলদের থেকে পদোন্নতি ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত খসড়ায়।
অন্যদিকে, জেলা অ্যাটর্নি শাখায় নিয়োগের প্রথম স্তর রাখা হয়েছে সরকারি জেলা অ্যাটর্নিকে। পাশাপাশি জেলায় ডেপুটি জেলা অ্যাটর্নি, অতিরিক্ত জেলা অ্যাটর্নি এবং জেলা অ্যাটর্নি নামে আরও তিনটি পদ রাখা হয়েছে। খসড়া অধ্যাদেশে সরকারি জেলা অ্যাটর্নির ৭০ শতাংশ পদে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। আর এ পদে ৩০ শতাংশ চুক্তিভিত্তির নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের আইন পেশায় পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় অ্যাটর্নি সার্ভিসের দুই পদে নিয়োগপ্রত্যাশীদের অযোগ্যতা, সার্ভিসের কর্মপরিধি, প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ-তত্ত্বাবধানসহ বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। খসড়া অধ্যাদেশটির ওপর বর্তমানে অংশীজনদের মতামত গ্রহণ করা হচ্ছে।
এর আগে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের সুপারিশ করা হয়েছিল। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ওই সুপারিশে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সব স্তরের আইন কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছেন মূলত রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং অপ্রতুল আইনি কাঠামোর আওতায়। আইন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে জবাবদিহির কোনো আইনি কাঠামো নেই। যোগ্যতা বা দক্ষতা বা সততা নয়, মূলত আইন কর্মকর্তাদের নিয়োগকে বিবেচনা করা হয় রাজনৈতিক আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে। সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের আইন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের মান মোটেও সন্তোষজনক নয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একটি স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন বলে কমিশন মনে করে।