চার্টাড ক্রেডিট কো-অপারেটিভের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব ৪ হাজার গ্রাহক। বছরের পর বছর টাকা ফেরত না পেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। কো-অপারেটিভের মালিক খান মো. ফিরোজ কবিরের ২৩৪ কোটি টাকার সম্পদ থাকার পরও গ্রাহকদের ১৩৪ কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। অভিযোগ রয়েছে, ফিরোজ কবির প্রতিষ্ঠানের অর্থ স্থানান্তর করে নামে-বেনামে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জমি কিনেছেন। এর মধ্যে রাজধানীর নিকুঞ্জ (উত্তর) আবাসিক এলাকায় ০.৯৯ একর জমি; বাউনিয়া এলাকায় ফিরোজ কবিরের নামে ১.৬৫ একর ও ২.৬৪ একর জমি; জোয়ার সাহারাস্থ নিকুঞ্জে ২ কাঠা ২২ ছটাক ২০ বর্গফুট জমি; রাজউক উত্তরা মডেল টাউনে ৫ কাঠা ও গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলার নাগরী রায়ের দিয়ায় ৮ একর জমি রয়েছে তার।
জানা গেছে, চার্টার্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সদস্যদের কাছ থেকে ১৩৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। এ ছাড়া সরকারের কাছে প্রতিষ্ঠানটির পাওনা রয়েছে ৭০ কোটি টাকা। ১৪০ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে দেওয়া জামানতের মূল্য ১৫০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মোট মূলধন দাঁড়ায় ৩৫৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঋণের পরিমাণ ১৪০ কোটি ৩ লাখ টাকা বাদ দিলে উদ্বৃত্ত রয়েছে ২১৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। হিসাব অনুযায়ী, শুধু উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়েই গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়ার সুযোগ থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি নানা অজুহাতে ৪ হাজার গ্রাহকের প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা পরিশোধে গড়িমসি করছে। এদিকে, টাকা ফেরত না পেয়ে আমানতকারীরা চার্টার্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভের পরিচালকদের বিরুদ্ধে থানায় ও আদালতে মামলা করেছেন। সমবায় অধিদপ্তরের তৎকালীন পরিদর্শক মো. তাজুল ইসলামও অডিটের সময় অনিয়ম পেয়ে মামলা করেন। ২০১৭ সালের ২০ জুলাই শেরেবাংলা নগর থানার সহযোগিতায় পরিচালক ফিরোজ কবির ও আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে মতিঝিল থানা পুলিশ। এরপর অফিস থেকে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড সরিয়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে। আট বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও এখন টাকা ফেরত পাননি গ্রাহকরা। অভিযোগকারীদের মধ্যে তানজিয়া খান, তানিম খান, তাহমিদা হোসেন, শাহানা হোসেন, ওমর আসাদ, রওশন আরা বেগম, আজিজুল হক ও মাহমুদা খানম দাবি করেন, তাদের জমা রাখা ৩ কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। কিছু গ্রাহককে চেক দিলেও তা ব্যাংকে ডিজঅনার হয়েছে। মতিঝিল থানার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটি মূলত মাইক্রোক্রেডিটভিত্তিক হলেও উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে বড় অঙ্কের আমানত সংগ্রহ করে। প্রথমদিকে কিছু লভ্যাংশ দিলেও পরে তা বন্ধ করে দেয়। চার্টার্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ লিমিটেডের হাতে এখনো ২১৪ কোটি টাকার বেশি উদ্বৃত্ত রয়েছে। তবুও গ্রাহকের টাকা ফেরত না দিয়ে সম্পদ গোপন ও অর্থ পাচারের চেষ্টা করছেন খান মো. ফিরোজ কবির। বিষয়টি নিয়ে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সমবায় অধিদপ্তর।