অনেক ত্রুটি রেখেই তাড়াহুড়া করে মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) চালু করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ। গতকাল উত্তরার মেট্রোরেলের ডিপিতে মেট্রোর সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। ডিএমটিসিএল এমডি বলেন, এমআরটি-৬ এর কোনো ‘সেফটি অডিট’ (নিরাপত্তা নিরীক্ষা) হয়নি। তাই ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়ে সেফটি অডিট করাবে সরকার। এজন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। তিনি জানান, মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণকাজে কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। আর যেখানে দুর্ঘটনা (ফার্মগেটে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু) ঘটেছিল সেই অংশে অনেক ত্রুটি রয়েছে। এজন্য দ্রুতই সেফটি অডিট করানো হবে। এ কাজের জন্য ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠানের আবেদন রয়েছে। সেফটি অডিট করতে খুব শিগগিরই দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
মেট্রোর বিয়ারিং প্যাড সম্পর্কে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, মেট্রোর বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস না। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে ফলে এ বিষয়ে আগে জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে, সেটা বলতে পারি ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেওয়ার কথা ছিল সেটা বসানো হয়নি। যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এর মধ্যে কোনো একটি কারণেও হতে পারে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের না। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কি না, যার আসলে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল; সে বুঝে নিয়েছে কি না- সেগুলো এখন দেখতে হবে। বিদেশি পরামর্শক রাখা হয়েছে, বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব তাদের এবং পরামর্শকদের বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব। আর ডিএমটিসিএল পরামর্শকের কাছ থেকে বুঝে নেবে। তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে তার উত্তর জানি না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট (ত্রুটি) আছে। ফলে সেটা এখনো মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বুঝে নেয়নি।
বিয়ারিং প্যাডের দুর্ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল ওই অংশের ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড আছে ২০২৫ সালের ২৯ জুন পর্যন্ত। কিন্তু এই ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড এখনো একসেপ্ট করেনি ডিএমটিসিএল। কারণ এখনো অনেক মেজর ডিফেক্ট রয়ে গেছে। সেগুলো ঠিক না করা পর্যন্ত ডিফেক্ট লায়াবিলিটির নোটিফিকেশন পিরিয়ড একসেপ্ট করব না। এটা এখনো ডিফেক্ট লায়াবিলিটি নোটিফিকেশন পিরিয়ডে আছে। যত সমস্যা আছে এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে।
তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর আবার সব পিলার পরিদর্শন করা হয়েছে। আগেও যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করে নোটিফিকেশন দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোও পুনরায় যাচাই করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে। এমআরটি লাইন-৬ সম্পর্কে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, প্রকল্পটি চালুর আগে ন্যূনতম ৬ থেকে ৯ মাসের ট্রায়াল রান ও বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে সে সময় দেওয়া সম্ভব হয়নি। আর তিন বছরে মেট্রো চালু হবে বা পাঁচ বছরে মেট্রোর কাজ শেষ করার ধারণা আসলে ভুল। কোনো মেট্রোর প্রথম সিভিল কন্ট্রাক্ট থেকে রাজস্ব অপারেশন শুরু করতে সাধারণত ছয় থেকে সাত বছর লাগে।
ঢাকার মেট্রো প্রকল্প সম্পর্কে ফারুক আহমেদ বলেন, সরকারের লক্ষ্য হলো, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজš§ যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। বিপুল অর্থ ব্যয়ে লাইন-১-এর কাজ করা হয়েছে, আর এর মান সবাই নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছেন। সরকারের উদ্দেশ্য হলো, একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নতমানের মেট্রো নির্মাণ সম্ভব হয়। বাংলাদেশে মেট্রো করতেই হবে। তবে তা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।