সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে চাষ করা ৮০ ভাগ জীবিত কাঁকড়া ও কুচে রপ্তানি হয়ে থাকে চীনে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীনে কাঁকড়া-কুচিয়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরার উৎপাদিত কূচে ও কাঁকড়া রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। বিপাকে পড়েছে এখানকার চাষিরা। দুই সপ্তাহ যাবত রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। অসংখ্য খামারে কুচে কাঁকড়ায় মড়ক দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়িরা বলছে এ অবস্থা চলতে থাকলে তারা চরমভাবে কোটি কোটি টাকা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হবে। যতসামান্য কাঁকড়া সিঙ্গাপুর, থাইল্যন্ড, তাইওয়ান, ব্যংকক, হংকং, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হলেও সেখানকার বাজারও এখন মন্দাভাব। ব্যবসায়িরা বলছে এ অবস্থা চলতে থাকলে তারা চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হবে।
মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলবর্তী উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি, দেবহাটা ও কালিগঞ্জের বেশ কিছু এলাকায় গড়ে উঠে কুচে ও কাকড়ার খামার। চিংড়ী চাষের পাশাপাশি শুধুমাত্র স্বল্প বিনিয়োগে অধিক লাভ থাকায় হাজার হাজার মানুষ ঝুকে পড়ে কুচে ও কাঁকড়া চাষে। স্থানীয়ভাবে এসব কাঁকড়া ও কুচে দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া, কালিগঞ্জের উজিরপুর, কালিবাড়ি, শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ বাজারে ডিপোগুলোতে বিক্রি হয়। এখান থেকে ডিপো মালিকরা কনটেইনারের মাধ্যমে ঢাকায় চলে যায়। সেখান থেকে সরাসরি বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। চীন দেশে করোনা ভাইরাসে মানুষ মারা যাওয়ার কারণে ২৫ জানুয়ারি থেকে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আভ্যন্তরীন স্থানীয় বাজারগুলোতেও কুচে কাঁকড়া কেনা বেচায় চরম ধস নেমেছে। আগে যে কাঁকড়া প্রতি কেজি বিক্রি হতো ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৪ টাকায়।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৯ সালে ৩১০ দশমিক ৯ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হয় সাতক্ষীরায়। ওই জমি থেকে দু’হাজার ১৯০ মেট্রিকটন ও সুন্দরবন থেকে এক হাজার ১০৯ মেট্রিকটন কাঁকড়া সংগ্রহ করা হয়। একই সময়ে কুচিয়া উৎপাদন হয় ৩৫০ মেট্রিকটন।
রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশে ২০১৯ সালে কাঁকড়া-কুচিয়ার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১০০ কোটি টাকা। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়লো এ খাত।
বাংলাদেশ লাইভ অ্যান্ড চিলড ফুড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, বাংলাদেশে নিবন্ধিত রপ্তানিকারকের সংখ্যা রয়েছে ২০৪টি। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
রপ্তানিকারকদের হিসেবে, বর্তমানে প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁকড়া-কুচিয়া মজুদ আছে। ১০০ কেজিতে দৈনিক ৫-৭ কেজি কাঁকড়া-কুচিয়া মারা যাচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে দ্রুত সরকারকে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন