প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়া লকডাউন করে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এই সংসদ সদস্য মনে করেন, রাজশাহীকে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে হলে শুধু রাজশাহীই নয়, পাশ্ববর্তী এই তিন জেলাকেও দ্রুত লকডাউন করতে হবে।
সোমবার বিকালে রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুতকরণের উদ্বোধনের পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
বাদশা বলেন, রাজশাহীর পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর এবং বগুড়াকেও লকডাউন করতে হবে। কারণ হচ্ছে আমরা খবর পেয়েছি যে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং বগুড়ায় বিদেশফেরত লোকের সংখ্যা বেশি এবং তাদের অনেকেই সরকারের নজরদারির বাইরে। তারা হারিয়ে গেছে, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খবরের কাগজে আমরা দেখেছি।
অতএব, কোনোমতেই আমরা এই পথে এ সমস্ত এলাকার লোকজনকে ঢুকতে দেব না। নাটোর-নওগাঁ এবং বগুড়াকেও একইভাবে লকডাউন করা দরকার। তাহলে আমাদের এই এলাকাটার সুরক্ষা হয়। আমাদের লকডাউনের দৃষ্টিভঙ্গিটা এই রকম। প্রত্যেককে ঘরে থাকতে বলতে হবে। ১৪ দিন যদি বিদেশফেরতরা কোয়ারেন্টাইন করেন তাহলে রোগী থাকলে আমরা খুঁজে বের করতে পারব। একইসাথে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হলে আমরা এই দুর্যোগ থেকে বের হতে পারব।
চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বাদশা বলেন, নিশ্চয় আমরা আপনাদের নিরাপত্তার কথা ভাবি। কিন্তু আপনাদেরও জনগণের নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে। আমরা মনে করি, সবাই সবার কথা ভাবব। দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করতে হবে।
তিনি বলেন, চীন আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। শুনেছি, চীনের ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেসবক চিকিৎসক আসতে চেয়েছেন। করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করার সদ্য অভিজ্ঞতা তাদের রয়েছে। এটা আমাদের সুযোগ, চীনের সাহায্য আমাদের অতি দ্রুত নেয়া দরকার।
বাদশা আরও বলেন, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর আজকে করোনাভাইরাসকে রুখে দিয়েছে। তাদের থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তাদের পদ্ধতিকে অনুসরণ করতে হবে। সিঙ্গপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে চীনের অভিজ্ঞতা বেশি কার্যকর। কারণ, ওইরকম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বাংলাদেশকেই বলা যেতে পারে। ইউরোপের দিকে তাকালে দেখা যাবে, আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও সেখানে কোনোকিছুই করা সম্ভব হয়নি। সেখানে চীনের পদ্ধতি কাজে লাগছে।
এ বিষয়ে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত মন্তব্য করে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, সরকারকে বলব, শ্রমিকদের এক মাসের বেতন দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিন। আর যারা অত্যন্ত গরীব মানুষ, দিন আনে দিন খায়, তাদের বাড়িতে খাদ্য পৌঁছে দেয়ার একটা ব্যবস্থা নিন। কিছু মন্ত্রী অহেতুক সকাল বেলা উঠে টেলিভিশনের সামনে কিংবা পত্রিকায় বিবৃতি দেন। এই ধরনের বিবৃতি দেয়া বন্ধ করতে হবে। কিছু মন্ত্রী তো রীতিমতো জোকারে পরিণত হয়েছেন। এটা আমরা কামনা করি না। এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। আজকে জনগণের মাঝে যদি থাকতেন তাহলে বুঝতেন মানুষ কী জানতে চায়। জানতে চায় যে প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য কিট দরকার। সেই কিট বিভাগীয় শহরগুলোতে পৌঁছে দিতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্তের ব্যবস্থা করতে হবে। বিভাগীয় শহর থেকে প্রাথমিকভাবে অন্যান্য জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলো যেন সুবিধা পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা দ্রুততার সাথে করা দরকার। রাজশাহীতে করোনাভাইরাস শনাক্তের যন্ত্রপাতি কত দ্রুত আনা যায় সে ব্যাপারে আমি সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ওপরে প্রতিনিয়ত চাপ সৃষ্টি করছি এবং খবর রাখছি। সে সমস্ত বিষয়গুেেলা আমার নজরদারিতে আছে। আমি রাজশাহীর একজন মানুষ। রাজশাহীর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমিও ক্ষতিগ্রস্ত হবো। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। এখনও সময় আছে, এই রকম কোনো ঘটনা ঘটবে না বলে আমার বিশ্বাস।
এর আগে বাদশা প্রধান অতিথি হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুতের উদ্বোধন করেন। রাজশাহী মহানগর ওয়ার্র্কার্স পার্টি এক লাখ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করবে। এতে সহযোগিতা করছে নগর যুবমৈত্রী, ছাত্র মৈত্রী, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন এবং নারী মুক্তি সংসদ।
উদ্বোধনের সময় নগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, সম্পাদকমণ্ডলির সদস্য সিরাজুর রহমান খান, আবদুল মতিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম