করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় চট্টগ্রামের পোশাক কারখানায় তৈরি হচ্ছে পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই)। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ওষুধালয় স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইপিজেডের বিশেষায়িত পোশাক কারখানা স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডকে এক লাখ পিপিই তৈরির কার্যাদেশ দিয়েছে। তাছাড়া এমন পিপিই বানাতেও অভিজ্ঞ হিসেবে পরিচিত এ প্রতিষ্ঠান।
মঙ্গলবারই তৈরিকৃত ৫০ হাজার পিপিই’র প্রথম চালান ঢাকায় পাঠানো হয়েছে এবং বাকি ৫০ হাজার পিপিই ২৬ মার্চের মধ্যেই তৈরির কাজ সম্পন্ন করে পাঠাতে পারবেন বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। এ পিপিইগুলো চিকিৎসক, নার্সরা ব্যবহার করবেন এবং গত ২৪ মার্চ এ কার্যাদেশ পেয়েই কারখানার শ্রমিকরা কাজে নেমে পড়েন।
দেশের স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের কার্যাদেশ পাওয়ার পর থেকেই দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পিপিই তৈরির নির্দেশনা দিয়েছি। সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সহিত পিপিই তৈরির কাজ চলছে। বাকি ৫০ হাজার পিপিই দুইদিনের মধ্যেই দিতে পারবো।
স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের পরিচালক শফিকুল রহমান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানকেই সরকার পিপিই তৈরির জন্য পছন্দ করেছেন। পিপিই তৈরির মধ্য দিয়ে আমরাও করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের পাশে দাঁড়াতে পেরে আনন্দিত। করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে এক লাখ পিপিই বানানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সরকারের এমন প্রস্তাবটি গ্রহণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পিপিই তৈরির কাজ শুরু করি।
স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, এ ধরনের কাজ করতে আমরা অভিজ্ঞ। আমাদের তৈরি পিপিই আমেরিকায় রফতানি হয়। পিপিই তৈরির বিশেষায়িত মেশিন ও অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দ্বারা এসব পিপিই তৈরি করা হয়। একটি বিশেষায়িত ফ্লোরের ১৩টি লাইনে ৭৩০ শ্রমিক পিপিই তৈরির কাজ করছে। নায়াগ্রা জলপ্রপাতে আমাদের কারখানার পিপিই আগেই রফতানি হতো।
আমেরিকার একটি বায়ার আমাদের পিপিই সংগ্রহে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বুকিং দেয়া আছে। এ বুকিং বাতিল করে সরকারের আগ্রহ ও সংকটকালীন বিবেচনায় নিয়ে পিপিই প্রস্তুত করা হচ্ছে।
স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) বিপ্লব কুমার মজুমদার বলেন, পিপিই তৈরির পাশাপাশি যেসব কাজের অর্ডারের প্রস্তাব পেয়েছি। সেগুলো দ্রুত তৈরির কাজ চলছে। পিপিই তৈরির জন্য কারখানায় বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকেও কারখানার নিরাপত্তা দিতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত কাপড় থাকায় সরকারের অর্ডার পাওয়া মাত্র কাজ শুরু করতে পেরেছি। এলসি করে কিংবা বিমানে এ কাপড় আনতে গেলে অনেকদিন সময় লাগতো। এখন শিপমেন্ট বন্ধ থাকায় দ্রুত সময়ে কাজ করতে সুবিধা হয়েছে। একই কথা বললেন নিরাপত্তায় থাকা ফ্যাক্টরির কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে দেশেও সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রামেও পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানাবিধ সমস্যার প্রতিরোধে কাজ করছেন এবং ইতিমধ্যে আরও কঠোর সচেতন হতে সরকারের নির্দেশনাও রয়েছে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট ও কারখানা সূত্র জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ওষুধালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত পৃথকভাবে এক লাখ পিপিই তৈরির দুটি কার্যাদেশ দেয়া হয়। গত ২৪ মার্চ এ কার্যাদেশ পেয়েই কারখানার শ্রমিকরা কাজে নেমে পড়েন। একদিনেই ৫০ হাজার পিপিই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৬ মার্চের মধ্যেই বাকিসব পিপিই তৈরির কাজ সম্পন্ন করবে। ইপিজেডের বিশেষায়িত পোশাক কারখানা স্মার্ট জ্যাকেট লিমিটেডের চতুর্থ তলার একটি ফ্লোরে পিপিই তৈরির কাজ করছে শ্রমিকরা। কাজের দেখভাল করছেন ফ্যাক্টরির বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। করোনাভাইরাস মোকাবেলার পর্যাপ্ত সরঞ্জাম পরিহিত অবস্থায় শ্রমিকরা এসব পিপিই তৈরিতে কাজ করছে। ১৩টি লাইনের আলট্রাসনিক মেশিনে পিপিইগুলো তৈরি করা হচ্ছে। কোনো রূপ সেলাই ছাড়াই তিনটি রঙের পিপিই তৈরি হচ্ছে। এ পিপিইগুলোতে কোনো রূপ পানি ঢুকবে না, প্রবেশ করবে না বাতাসও। কারখানাটিতে এখন পিপিই তৈরিতেই ব্যস্ত সময় পার করছেস শ্রমিকরা। আর করোনা প্রতিরোধে সরকারের পাশে দাঁড়াতে প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কারখানাটির কর্তা ব্যক্তিরা।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম