১১ জুলাই, ২০২০ ২০:২৬

পালিয়ে না এলে আমাকেও মেরে ফেলত, যুক্তরাষ্ট্র থেকে হংকংয়ের ভাইরোলজিস্ট

অনলাইন ডেস্ক

পালিয়ে না এলে আমাকেও মেরে ফেলত, যুক্তরাষ্ট্র থেকে হংকংয়ের ভাইরোলজিস্ট

ভাইরোলজিস্ট লি-মেং ইয়ান

‘আমার কম্পিউটার হ্যাক করা হয়ছিল। সরকারের গুণ্ডারা লাগাতার হুমকি দিচ্ছিল। জানতাম পালিয়ে না এলে আমাকেও মেরে ফেলবে ওরা,’ চীনের বিরুদ্ধে মুখ খুলে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন হংকংয়ের ভাইরোলজিস্ট লি-মেং ইয়ান।

গত বছর ডিসেম্বরের আগেই চীনে সার্স-১ এর মতো ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এই ভাইরাসের চরিত্র ছিল সার্সের থেকে আলাদা, আরও সংক্রামক, বলেছেন লি। হংকং স্কুল অব পাবলিক হেলথের ভাইরোলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ লি জানিয়েছেন, তার গবেষণা ভাইরাস নিয়েই। মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা ও সার্স ভাইরাস নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে গবেষণা করছেন তিনি।

ভাইরোলজিস্টের কথায়, উহান থেকে ভাইরাসের সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়ার অনেক আগেই করোনা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন তিনি। লি বলেছেন, হংকংয়ের বিশেষ বায়োসেফটি ল্যাবে এই নতুন ভাইরাস নিয়ে তিনি পরীক্ষা করতে শুরু করেন। বুঝতে পেরেছিলেন এই ভাইরাল স্ট্রেন অনেক বেশি প্রাণঘাতী। কীভাবে এই ভাইরাসের মোকাবিলা করা যায় তার উপায় খুঁজতে শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু গবেষণার কাজ বেশিদূর যাওয়ার আগেই তার কাছে হুমকি ফোন আসতে শুরু করে। তার কম্পিউটার হ্যাক করা হয়। ব্যক্তিগত তথ্যেও নজরদারি শুরু হয়।

চীনের সরকারি কর্মকর্তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছিল ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রামক ভাইরাল স্ট্রেন সার্স-কভ-২ এর কথা বেমালুম চেপে গিয়েছিল তারা। দাবি লি-এর। তার বক্তব্য, চীন জানত নতুন এক ধরনের সংক্রামক ভাইরাস মহামারী হতে শুরু করেছে। কিন্তু এই তথ্যই তারা গোপন করেছিল। বিজ্ঞানীদের এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করতে দেওয়া হয়নি।

লি বলেছেন, তিনি তার সুপারভাইজারকে এই ভাইরাসের ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিশেষ পাত্তা দেননি। এরপর চুপিচুপি লি নিজেই গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু কোনওভাবে সেই খবর ছড়িয়ে যায়। ভাইরোলজিস্টের অভিযোগ, চীনের যেসব ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাস নিয়ে চর্চা করছিলেন তারা আচমকাই গায়েব হতে শুরু করেন। অনেকের মৃত্যুর খবরও আসে। ভয় ও আতঙ্কে মুখে কুলুপ আঁটেন ডাক্তারা। রোগীদের পরামর্শ দেওয়া হয় মাস্ক ব্যবহার করার। কিন্তু এই ভাইরাসের সংক্রমণ যে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে অর্থাৎ হিউম্যান ট্রান্সমিশন হতে পারে সেই ব্যাপারে কিছুই জানাননি ডাক্তাররা। সকলেই মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হন।

“গবেষণা বন্ধ করার জন্য লাগাতার হুমকি আসছিল। এই ভাইরাস যে অতিমহামারীর পর্যায়ে যেতে পারে সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। জানতাম চীনে দাঁড়িয়ে এ কথা বললে আমাকেও বাকিদের মতো খুন করে ফেলা হত,” দাবি লি ইয়ানের। বলেছেন, গত ২৮ এপ্রিল হংকং থেকে ফ্লাইট ধরে তিনি আমেরিকা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। সঙ্গে করে নিজের গবেষণার রিপোর্ট, ল্যাবের গোপন ক্যামেরা ও সেন্সরও নিয়ে যান। “জানি আমার জীবন এখনও সঙ্কটে। হংকংয়ে নিজের বাড়ি ফিরে যেতে পারব না। আমেরিকায় পালিয়ে এসেছি শুধু এই সত্যিটা বলার জন্যই,” বলেছেন ভাইরোলজিস্ট লি-মেং ইয়ান।

সূত্র : দ্য ওয়াল।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

সর্বশেষ খবর