দৈনিক সংক্রমণের হার বৃদ্ধির অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হলো শুক্রবার। এদিন যুক্তরাষ্ট্রে আরও এক লাখ ৭৭ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৮ হাজার রোগী। গত ৯ দিনই আগের দিনের রেকর্ড ভেঙেছে সংক্রমণের হার বৃদ্ধির। এ কারণে সারা আমেরিকায় করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪৬ স্টেটে সর্বসাধারণকে চালচলনে পরিবর্তন ও মাস্ক পরতে বলা হয়েছে।
এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগের মতোই হাস্যরসের অবতারণা করছেন। ভ্যাকসিন এসেছে বলে যিকির তোলে লোকজনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। অপরদিকে, নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সংক্রমণের হার যেসব এলাকায় বাড়ছে সেগুলোতে লকডাউন ঘোষণার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।
ইতোধ্যেই নিউ মেক্সিকো এবং ওরগণে দুই সপ্তাহের জন্যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। নিউইয়র্ক ও নিউজার্সিতে রাত ১০টার পর রেস্টুরেন্ট, বার, ব্যায়মাগারে কার্ফিউ জারি, রাত ৮টার মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকান বন্ধের নির্দেশ, নিউজার্সিতে সর্বোচ্চ ৬ জন মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কোনো অনুষ্ঠান করার অনুমতি পাবেন। নিউইয়র্কে এ সংখ্যা ১০ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংক্রমণের হার বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সোমবার থেকে নিউইয়র্কের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কথা জানিয়েছেন সিটি মেয়র। ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াশিংটন স্টেটেও কড়াকড়ি আরোপের কথা বলেছেন স্টেট গভর্নররা। ৪৬ স্টেটের প্রশাসন থেকে সর্বসাধারণকে চালচলনে পরিবর্তন ও মাস্ক পরতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দ্বিতীয় ধাক্কায় যেন প্রথমবারের মতো মহামারিতে রূপ না নেয়, সে চেষ্টা সবাই চালাচ্ছেন।
শুক্রবার জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেন, এই সংকটে ফেডারেল প্রশাসনের ত্বড়িত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা। কিন্তু তা অনুপস্থিত। আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ী হলেও আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পাব জানুয়ারিতে। অথচ করোনাভাইরাস সে সময় দেবে না। তার আগ্রাসী তৎপরতা চালিয়ে মানুষকে ক্ষত-বিক্ষত করবে। এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এ পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা যথাযথভাবে অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ফেডারেল প্রশাসন থেকে।
২৬ নভেম্বর থ্যাঙ্কসগীভিং ডে। এ উপলক্ষে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার যাতে কেউই ঘটা করে কিছু না করে, সে নির্দেশ জারি হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নিউ মেক্সিকো স্টেটে সোমবার থেকে শুরু হবে লকডাউন। সবকিছু বন্ধ থাকবে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের স্টোর ছাড়া কোনকিছু খোলা থাকবে না। ওরেগণ স্টেটেও লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ব্যায়ামাগার, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। ৬ জনের বেশি মানুষ জড়ো হতে পারবে না। ওরেগণের পার্শ্ববর্তী ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াশিংটন স্টেট প্রশাসনও লোকজনকে চলাফেরায় সতর্ক থাকতে বলেছে। দূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নর্থ ডেকটা স্টেটে মাস্ক বাধ্যতামূলক। রেস্টুরেন্টের ভেতরের অর্ধেক স্থান খালি রেখে আসন সাজাতে হবে। ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ পর্যন্ত হাইস্কুলে শীতকালীন খেলাধুলা বন্ধ থাকবে।
শুক্রবার রাত ১০টা থেকে নিউইয়র্কের রেস্টুরেন্ট, বার, ক্লাব, জিম বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি হয়েছে। করোনা সংক্রমণের হার ৩% এ উঠলে সোমবার থেকে সব স্কুল দু’সপ্তাহের জন্যে বন্ধ হয়ে যাবে বলে মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো শুক্রবার জানান। এই স্টেটে ৬ জনের বেশি লোক একত্রিত হবার বিরুদ্ধেও নির্দেশ দিয়েছেন স্টেট গভর্নর। আগেই কার্যকর হয়েছে মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে বেড় হলেই জরিমানা গুণতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ