১৭ এপ্রিল, ২০২১ ১১:৫৪

করোনা সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে দক্ষিণ এশিয়া

অনলাইন ডেস্ক

করোনা সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে দক্ষিণ এশিয়া

প্রতীকী ছবি

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে ইতোমধ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। এই ভাইরাসের প্রকোপে প্রতিদিন হাজার হাজার প্রাণহানি ঘটছে। সংক্রমিত হচ্ছে লাখ লাখ।

এই ভাইরাসের তাণ্ডবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমেরিকা। লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল, ইউরোপের ইতালি, ফ্রান্স, ব্রিটেনও এই ভাইরাসের কবলে পড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। আমেরিকা-ইউরোপের পর  করোনা সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে দক্ষিণ এশিয়া। এই অঞ্চলের দেশগুলোতে ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে সংক্রমণ। 

গত ১৬ এপ্রিল ভারতে একদিনে ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ সংখ্যা এখন পর্যন্ত বিশ্বে সর্বোচ্চ। এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা আকাশ ছুঁয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যায় রেকর্ড হয়েছে বেশ কয়েকবার। বাংলাদেশেও শুক্রবার মৃতের সংখ্যা প্রথমবারের মতো ১০০ পেরিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়া দ্রুতই কোভিড-১৯ মহামারীর বৈশ্বিক কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি)।

আইএফআরসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কা তুলে ধরে বলা হয়, দ্রুতই কোভিড-১৯ মহামারীর বৈশ্বিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে উঠছে দক্ষিণ এশিয়া। করোনাভাইরাসের নতুন এ মারাত্মক ও ভয়াবহ সংক্রামক ঢেউটির কারণে রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে এ অঞ্চলের হাসপাতালগুলো। সামাজিক ব্যবস্থায়ও পড়েছে এর প্রভাব, লাখো মানুষ এরই মধ্যে দারিদ্র্য ও অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের দেশগুলোতে প্রতিদিন অন্তত দুই লাখ মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। ভারতে বর্তমান শনাক্তের সংখ্যা গত বছর চূড়ান্ত সংক্রমণের সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ। বাংলাদেশে গত বছর জুনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছিল। এবার এপ্রিল নাগাদই সে সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। পাকিস্তানেও প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। সেখানেও প্রায় প্রতিদিন ভাঙছে মৃত্যুর সংখ্যার রেকর্ড।

আইএফআরসির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক হেড অব ডেলিগেশন উদয় রেগমি বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে যে গতিতে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে তা সত্যিই ভীতিকর। ভারতে বর্তমানে অ্যাকটিভ কেস রয়েছে সাড়ে ১৫ লাখের বেশি। গত মাসের চেয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৫০ গুণ।

তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এটি বিশ্বের সব দেশের জন্য একটি চূড়ান্ত সতর্কবার্তা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের সামান্য বিশ্রাম নেয়ারও এখন সুযোগ নেই। সংক্রমণের এ মাত্রা সম্মুখসারির কর্মীদের জন্য সর্বনাশা হতে পারে। এসব দেশে বয়স্ক ও যারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন সেসব মানুষের জন্য স্বেচ্ছায় সেবা দিয়ে যাচ্ছে হাজারো রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট কর্মী। এরই মধ্যে লাখো মানুষ চরম দারিদ্র্য মোকাবেলা করছে। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের কাছে খাবার, পানি ও অন্যান্য ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে গতকাল প্রথমবারের মতো একদিনে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদিন মৃত্যু হয় ১০১ জন করোনা রোগীর। এতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৮২ জনে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা নয় হাজার ছাড়ায় ৩১ মার্চ। আট হাজার থেকে মৃত্যু নয় হাজার ছাড়াতে সময় লেগেছিল ৬৭ দিন। আর সর্বশেষ এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে। দেশে চলমান এ মহামারীতে এটিই দ্রুত সময়ে এক হাজার মৃত্যুর রেকর্ড। এর আগে এক হাজার মৃত্যুতে সবচেয়ে কম সময় ছিল ২৩ দিন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪ হাজার ৪১৭ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

আইএফআরসির এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জরুরি স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বয়কারী ডা. অভিষেক রিমাল বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে বি.১.১.৭ ও বি.১.৩৫১ ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ পাওয়া গেছে। এগুলো মূলত যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট। এগুলো আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক ও ক্ষতিকর। ফলে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে, যা দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য বোঝায় পরিণত হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

সর্বশেষ খবর