বগুড়ায় হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা ও নতুন নতুন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। জেলায় সরকারি হিসেবে গত ২০২০ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৭৭ জন আর আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার মানুষ। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নারীও আছে। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার কারণে রাজশাহী বিভাগে বগুড়াকে বলা হচ্ছে হটস্পট। হটস্পটের মধ্যেই সংকট রয়েছে আইসিইউ এর। সরকারি হাসপাতালের ২১টি আইসিইউ বেডেই রোগী রয়েছে।
গত ১৪ এপ্রিল থেকে লকডাউন শুরু হলে শহরে সাধারণ মানুষের চলাচল কমে যায়। লকডাউনের সংবাদের পর থেকে জেলা শহরে সাধারণ মানুষের ভিড় বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের চলাচল কমে গেলেও ১৪ থেকে ১৯ এপ্রিল প্রথম ছয় দিনে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৪৩০ জন।
বগুড়ায় গত ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৬৮ জন। আর মারা গেছে ৫ জন। এছাড়া গত এক বছরে জেলায় মোট মৃত্যু হয়েছে ২৭৭ জনের। করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৪১৮ জন এবং সুস্থতার সংখ্যা ১০ হাজার ১১০ জনে দাঁড়িয়েছে।
বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাব মতে, গত ১৮ এপ্রিল আক্রান্ত হয় ৬৮ জন, ১৭ এপ্রিল এর হিসেবে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হন ৮৫ জন, ১৬ এপ্রিল ৯২ জন, ১৫ এপ্রিল ৪৯ জন, ১৪ এপ্রিল ৩৮ জন। এর আগে ১৩ এপ্রিল আক্রান্ত হয়েছিল ৯৮ জন। সব মিলিয়ে ৪৩০ জন করোনা আক্রান্ত হয়।
সর্বশেষ সোমবার ১৯ এপ্রিল করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার রওশন আরা (৫০), সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার জিল্লুর রহমান (৫৫), বগুড়ার জলেশ্বরীতলা এলাকার শেফালী বেগম (৮০), শহরের শিববাট্টি এলাকার ইমদাদুল হক (৭৭) এবং সারিয়াকান্দির চিলপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলাম (৫৫)। এদের মধ্যে রওশন আরা এবং জিল্লুর রহমান ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে এবং বাকি তিনজন টিএমএসএস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বগুড়ায় করোনার প্রভাব কম থাকলেও চলতি বছরের মার্চ পর থেকে জেলায় করোনাভাইরাসের প্রভাব বেড়ে দিগুণ হয়ে উঠেছে। করোনাভাইরাসের রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলায় আইসিইউ বেড সংকটে পড়েছে। আইসিইউ বেডের জন্য সংকটাপন্ন রোগীর স্বজনরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন।
এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে বগুড়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে নির্দেশনা প্রচার, লকডাউনের চলাফেরা ও বিধি নিষেধ জানিয়ে শহরজুড়ে মাইকিং করা হয়েছে। তারপরও থেমে নেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা।
বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, বগুড়ায় সরকারি হাসপাতালে মোট ২১টি আইসিইউ বেড রয়েছে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১৩টি ও বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে রয়েছে ৮টি। করোনার প্রভাব বেড়ে যাওয়ার কারণে আইসিইউ বেড আপতত খালি নেই। তবে রোগী আরো বেড়ে গেলে সংকট সৃষ্টি হবে।
বগুড়া বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মুখপাত্র আব্দুর রহিম রুবেল জানান, তাদের হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট রোগী ভর্তি আছে ৫৭ জন।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন