প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে মহাবিপর্যয় নেমে এসেছে ভারতে। এরই মধ্যে দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণ ৩ লাখ ১৫ হাজারে পৌঁছেছে। তবে এবার জানা গেল এর নেপথ্যের কারণ।
দেশটিতে করোনার ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই সেখানে থাবা বসিয়েছে ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়্যান্ট’। মনে করা হচ্ছে, ইতিমধ্যেই দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে তা ছড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে অন্যতম পশ্চিমবঙ্গ। মহারাষ্ট্র এবং দিল্লিতেও এই ট্রিপল মিউট্যান্টের সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তারা জানাচ্ছেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের তিনটি আলাদা স্ট্রেন মিলে তৈরি ভাইরাসের এই নয়া ভ্যারিয়্যান্টের সংক্রামক ক্ষমতাও প্রায় তিন গুণ।
এই নয়া স্ট্রেনের দাপটেই বিশ্বজুড়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, মত বিশেষজ্ঞদের। সংক্রামক শক্তি অনেক বেশি তো বটেই, শারীরিক অবস্থার অবনতিও খুব দ্রুত হচ্ছে এই নয়া স্ট্রেনে আক্রান্তদের। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী, ঠিক সময় লাগাম পরানো না গেলে ‘এবার সংক্রমণ সুনামির আকার ধারণ করতে পারে দেশটিতে।’
মোকাবিলার উপায় কী? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আপাতত এর বিরুদ্ধে একের পর এক ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে যাওয়া ছাড়া কোনও পথ নেই। তবে সবার আগে প্রয়োজন এর চরিত্র বিশ্লেষণ, যা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে করার পরামর্শই দিচ্ছেন তারা। প্রয়োজন নিয়মিত জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের। তবে ভারতে যেখানে মোট আক্রান্তের মাত্র ১ শতাংশের ওপর এই জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে সেখানে এক ধাক্কায় সেই হার বাড়িয়ে তোলাই বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এ বিষয়ে গড়িমসির কোনও জায়গা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ স্ট্রেন ঠিক সময়ে ধরা না-যাওয়ার কারণেই হয়তো অগোচরে এতটা ছড়িয়ে পড়েছে এই ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট’।
ভাইরাস যত ছড়ায় সেটির মিউটেশনের হারও তত বৃদ্ধি পায়। এই নয়া স্ট্রেনটি শিশুদেরও সংক্রমিত করছে। তবে এখনও পর্যন্ত এই নয়া ভ্যারিয়্যান্ট নিয়ে বিশেষ কোনও তথ্য নেই বিজ্ঞানীদের কাছে। যে কারণে আপাতত ‘ভ্যারিয়্যান্ট অব কনসার্ন’-এর বদলে ‘ভ্যারিয়্যান্ট অব ইন্টারেস্ট’-এর তালিকাতেই রাখা হয়েছে এটিকে।
প্রশ্ন উঠছে, এখনও পর্যন্ত যে ভ্যাকসিনগুলো হাতে রয়েছে তা দিয়ে কি এই নয়া মিউট্যান্টকে রোখা সম্ভব? যে তিনটি পৃথক স্ট্রেনের সমন্বয়ে এই নয়া ভ্যারিয়্যান্টের জন্ম তার মধ্যে দু’টি শরীরে স্বাভাবিকভাবে তৈরি হওয়া কোভিড প্রতিরোধ ক্ষমতাকে হার মানাতে সক্ষম। ফলে অ্যান্টিবডির মাধ্যমে তা রোধ করা যাবে না। কাজেই উপলব্ধ ভ্যাকসিনে তা রোধ সম্ভব কি না, তা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, মত বিশেষজ্ঞদের। সূত্র: আনন্দবাজার
বিডি প্রতিদিন/কালাম