অতিরিক্ত ওজন শরীরের জন্য ভালো নয়। এর কারণে দেখা দেয় নানা রকমের সমস্যা। তাই পৃথিবীর অনেক দেশেই স্থূলতাকে (ওবেসিটি) একটি রোগ হিসেবে মনে করা হয়। এই রোগ নিরাময়ে ঢাকায় অ্যাপোলো হাসপাতালে সবচেয়ে আধুনিক সার্জারি ইউনিট রয়েছে। এই হাসপাতালে এখন থেকে একজন রোগী তার স্থূলতা নিরাময়ের জন্য যাবতীয় সার্জারিসহ অন্যান্য সব সুবিধা পাবেন। একই সঙ্গে এখানে খুব কম খরচেই এই সার্জারি করা যাবে বলেও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, স্থুলতা নিরাময় সার্জারি করাতে দেশের বাইরে যেখানে ৫০ হাজার ডলার গুনতে হতো, এখন অ্যাপোলোতে সেই সার্জারি করানো হবে মাত্র ১০ হাজার ডলারে।
জানা যায়, শুধুমাত্র অতিরিক্ত খাওয়া দাওয়াই স্থুলতা সৃষ্টি করে তা কিন্তু নয়। বিলাসবহুল জীবনযাপন এমনকি শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতিও এর অন্যতম প্রধান কারণ। সাধারণত বডি মাস ইনডেক্স বা বি এম আই দিয়ে শরীরের স্থুলতা পরিমাপ করা হয়, যেখানে বিএমআই = ওজন (কেজি)/ উচ্চতা (মিটার- ২)। যেমন- একজন ব্যক্তির ওজন যদি ৮০ কেজি এবং উচ্চতা ১.৭০ মিটার হয় তাহলে উক্ত সূত্রানুযায়ী তার বিএমআই হবে ২৭.৬৮ কেজি/মিটার- ২।
বি এম আই রেঞ্জ সাধারণত ১৮.৫-২৩.৫ কেজি/মিটার- ২। এই রেঞ্জের বাইরে কারো বি এম আই থাকলে তার স্থূলতা বা ওবেসিটি আছে বলে মনে করা হয়।
বিভিন্ন জটিল ও দূরারোগ্যব্যাধী যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্লিপ অ্যাপনিয়া, ফ্যাটি লিভার, অস্টিওপোরোসিস ইত্যাদির সাথে ক্যান্সার হবার উচ্চ ঝুঁকিসহ বন্ধ্যাত্ব এবং নিম্নমানের জীবন এ সব কিছুই ওবেসিটির কারণে হয়ে থাকে।
সুতরাং ওবেসিটি বা স্থূলতার কারণেই নানাবিধ মরণঘাতী স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে করে একজন স্থূল ব্যক্তির গড় আয়ু একজন সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তির চেয়ে প্রায় ১৫-২০ বছর কম হয়ে থাকে।
তাই ওষুধ বা অস্ত্রোপচার নয়, স্থূলতা প্রতিরোধ করতে প্রয়োজন সঠিক ও সময়োপযোগী চিকিৎসা। স্থূলতা বিষয়ক চিকিৎসক, এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, পুষ্টিবিদ, সাইকোলজিস্ট, এনেস্থেশিওলজিস্ট এবং অন্যান্য সার্জনের সমন্নয়ে গঠিত এক দল অভিজ্ঞ ও দক্ষ মেডিকেল টিম দ্বারাই একটি সময়োপযোগী ও অত্যাধুনিক স্থূলতা নিরাময় চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব।
এ ব্যবস্থার প্রথমেই একজন পুষ্টিবিদ একজন স্থূলকায় ব্যক্তিকে একটি পরিপূর্ণ ও সঠিক খাদ্য তালিকা দিয়ে থাকেন। ৬ মাস উক্ত ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে তার শারীরিক উন্নতি ঘটলে তাকে দেয়া এই খাদ্য তালিকা ও পরামর্শ অনুযায়ী চলতে বলা হয়। বি এম আই যদি ৩৩.৫ কেজি/মিটার ২ এবং যে কোনো জটিল ব্যাধী যেমন- ডায়াবেটিস থাকে তবে তাকে স্থূলতা নিরাময়ক সার্জারির জন্য বলা হয়ে থাকে। রোউক্স-এন-ওয়াই গ্যাস্ট্রিক নামক সার্জারিকে এ ধরনের স্থূলতা নিরাময়ের জন্য সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি বলে মনে করা হয়।
রোউক্স-এন-ওয়াই গ্যাস্ট্রিক নামক সার্জারি পদ্ধতিতে ল্যাপরোস্কপি করা হয়ে থাকে। এটা একটি অত্যাধুনিক স্থূলতা নিরাময় অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে যেখানে রোগী পরের দিন থেকেই স্বাভাবিক হাটাচলা করতে পারেন। এ ব্যবস্থায় একজন রোগীকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য অস্ত্রোপচারের ন্যায় এতেও সাধারণ কিছু জটিলতা রয়েছে তবে তা উচ্চমাত্রার নয়।
এ ধরণের অস্ত্রোপচারে সাধারণত একজন রোগী প্রায় ১ থেকে ১.৫ বছরে প্রায় ৬০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে নিতে পারেন। তবে একটি সমন্নিত স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য তার খাদ্যাভাস ও জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।
অ্যাপোলো হাসপাতাল ঢাকায় রয়েছে এই স্থূলতা নিরাময়ের সবচেয়ে আধুনিক সার্জারি ইউনিট।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম