মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বরের বয়স ১০৭ কনের ৯২

দিনাজপুর প্রতিনিধি

পাঁচ বংশধরে অবস্থান করায় দিনাজপুরের বিরলে পুনরায় বিয়ে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আলোচিত হয়েছেন এক প্রবীণ দম্পতি। সম্পর্কের স্তর শেষ হওয়ার কারণে অর্থাৎ পাঁচ পিঁড়ি পার হওয়ার কারণে এ আয়োজন বলে স্থানীয়রা জানান। আলোচিত বরের বয়স ১০৭ বছর এবং তার নাম বৈদ্যনাথ দেবশর্ম্মা। কনের বয়স ৯২ বছর নাম পঞ্চবালা। বিয়ের আয়োজক ও স্থানীয়রা জানান, গতকাল জাঁকজমকভাবে সনাতন (হিন্দু) ধর্মের রীতি অনুযায়ী আবার এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিয়েতে, বিয়ের গীত, গায়ে হলুদ, পুরহিত, মন্ডপতলা, বউভাত, বাসরঘর, সাজসজ্জা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও ভূরিভোজের কোনোটারই কমতি ছিল না।

 বিশেষ করে প্রবীণ এ বর-কনেকে এক নজর দেখার জন্য এলাকার উৎসুক জনতারও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেক রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ আলোচিত বিয়ের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে সবাই এক অন্য রকম আনন্দ করেছেন। নতুন প্রজন্মের কাছে এই প্রবীণ দম্পতির পুনঃ বিয়েটা একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে এমনটাই বললেন স্থানীয়রা। প্রবীণ দম্পতির পুনঃ বিয়ের ঘটনাটি ঘটেছে, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউপির দক্ষিণ মেড়াগাঁও গ্রামে।  এখন তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। বর বৈদ্যনাথ দেবশর্ম্মা সাংবাদিকদের জানান, দক্ষিণ মেড়াগাঁও গ্রামের স্বর্গীয় পিতা ভেলশু নাথ দেবশর্ম্মা ও স্বর্গীয় মাতা ভুলে বালা দেবশর্ম্মার পুত্র তিনি। কনে পঞ্চবালা দেবশর্ম্মাও একই এলাকার স্বর্গীয় বিদ্যা মন্ডল দেবশর্ম্মা ও স্বর্গীয় শুভ বালা দেবশর্ম্মার কন্যা। গত প্রায় ৮০ বছর আগে তাদের সামাজিকভাবে হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী বিয়ে হয়। এরপর সংসার জীবনে বিয়ের প্রায় তিন বছরের মাথায় এক কন্যা সন্তান আসে। কন্যার নাম রাখা হয় ঝিলকো বালা দেব শর্ম্মা। কন্যা ঝিলকো বড় হলে তাকে রীতিমতো পাত্রস্ত করা হয়। বিয়ে দেওয়ার কয়েক বছর পর কন্যার একটি আদরী বালা নামের কন্যা সন্তান অর্থাৎ আমাদের নাতনির জন্ম হয়। নাতনি আদরী বালাও বড় হলে তাকেও বিয়ে দেওয়া হয়। নাতনির বিয়ের পর তার কোলজুড়ে রেখা বালার জন্ম হয়। ফলে আমরা সম্পর্কে বড় বাবা ও বড় মা হই। এরপর রেখা বালা বড় হলে তাকেও বিয়ে দেওয়া হয়। কয়েক বছর পর তাঁরও একটি রুমি বালা নামে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সে আমাদের নাতনির নাতনি। রুমি আমাদের সম্পর্কে কী বলে ডাকবে। তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের স্তর শেষ হয়ে গেছে। তার পরও সৃষ্টি কর্তার অশেষ কৃপায় বেঁচে আছি বলে আমরা সম্পর্কের পঞ্চমস্তর বা পাঁচ পিঁড়িতে অবস্থান করছি। আমরা দুটি মানুষ থেকে বর্তমানে আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। এলাকাবাসীরা জানান, দম্পতি যদি জীবিত থাকে এবং সম্পর্কের পাঁচ পিঁড়িতে অবস্থান করে তাহলে সনাতন (হিন্দু) ধর্মের রীতি অনুযায়ী পুনঃবার বিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। তাই ওই প্রবীণ দম্পতির পুনরায় বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিরলের ধর্মপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাবুল চন্দ্র সরকার প্রবীণ দম্পতির পুনঃবিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বর বৈদ্যনাথ কন্যা সন্তান ছাড়া পুত্র সন্তান নেই। কন্যার কন্যা এভাবে তিনি পাঁচ পিঁড়িতে অবস্থান করছেন। বর বৈদ্যনাথ দেবশর্ম্মা (১০৭) এবং কনে পঞ্চবালা দেবশর্ম্মা (৯২)। নতুন প্রজন্মের কাছে এই প্রবীণ দম্পতির পুনঃ বিয়েটা একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে এমনটাই বললেন স্থানীয়রা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর