শনিবার, ২২ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

হার্ভেস্টার কিনে ঠকছেন কৃষক

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

হার্ভেস্টার কিনে ঠকছেন কৃষক

কৃষির আধুনিকায়নে যান্ত্রিক কৃষির কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে শ্রমিক সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় অল্প সময় ও খরচে ধান গোলায় তুলতে কম্বাইন হার্ভেস্টার অত্যন্ত কার্যকরী ও সময় উপযোগী ভূমিকা পালন করেছে। কম্বাইন হার্ভেস্টারসহ বিভিন্ন কৃষিযন্ত্র কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করতে সরকার যন্ত্রসমূহের ৫০% থেকে ৭০% পর্যন্ত ভর্তুকি প্রদান করছেন। সরকারের এই সময় উপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে কৃষক বেশ লাভবান হলেও কিছু কিছু কোম্পানি নিম্নমানের যন্ত্র সরবরাহ করছে। এতে ঠকছেন কৃষক। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার দুজন কৃষক মেটাল কোম্পানির হার্ভেস্টার কিনে বিপাকে পড়েছেন। প্রথম দিকে এসব মেশিন দিয়ে ভালোভাবে ধান কাটতে পারলেও কয়েকদিন পরেই মেশিনের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।  ফিল্টারের সমস্যা দেয়। কাঁচি নষ্ট হয়। চাকার সমস্যা দেখা দেয়, রাবারের সমস্যা দেখা দেয়। বারবার ইঞ্জিনের সমস্যা হয়। যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করেও স্থায়ী সমাধান হয় না। ফলে লাভ তো দূরের কথা। বারবার মেশিন মেরামত করতে করতেই কৃষকের জান কাহিল। আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কৃষক মো. তাহের মিয়া গত বোরো মৌসুমে মেটাল এগ্রিটেক কোম্পানি এফএম ওয়ার্ল্ড ব্র্যান্ডের ১টি হার্ভেস্টার ক্রয় করেন। যার দাম ২০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে তাহের মিয়া পরিশোধ করেন ৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। সরকার ভর্তুকি দেয় ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। মোট ১৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকিটা কিস্তিতে তাকে পরিশোধ করতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, হার্ভেস্টার মাঠে নামার পর হতে এক দিনের জন্যও ভালোভাবে ধান কাটা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন নষ্ট হয়। প্রতিদিন কোনো না কোনো পার্টস ভাঙেই। একবার নষ্ট হলে ম্যাকানিক আনতে দুই দিন অপেক্ষা করতে হয়। এতে কৃষক বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২৫-৩০ দিনের একটি মৌসুমে ২০ দিনই মেশিন নষ্ট থাকে। বর্তমানে ধান কাটার ভরা মৌসুম অথচ গত ১০ দিন ধরে মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এরই মাঝে মৌসুম শেষ হয়ে যাবে। ২০ লাখ টাকার মেশিন এ পর্যন্ত ২০ টাকাও ইনকাম করতে পারিনি। তাহের মিয়ার দাবি, এই হার্ভেস্টার ফেরত নিয়ে তার টাকা যেন মেটাল কোম্পানি ফেরত দেয়।

 এলাকার কৃষক দুলাল, রুবেল, রাশেদ তামজিদ, মেহেদী, জালু, মোশারফ বলেন, এই মেশিনে ধান কাটার আশায় আমরা দিনের পর দিন অপেক্ষা করছি। পাকা ধান নিয়ে বসে আছি। ঝড়বৃষ্টিতে সব ধান শুয়ে গেছে। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা খরচ করে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে হয়। সরকারের কাছে আকুল আবেদন এই ধরনের নিম্নমানের মেশিন দিয়ে যেন আমাদেরকে ক্ষতি না করে।  মেটাল কোম্পানির আরও একটি হার্ভেস্টার নিয়েছিলেন আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের বাউতলা গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন বাচ্চু। তিনি জানান, মেশিন নেওয়ার সময় কোম্পানি আমাকে বলেছিল দৈনিক ২০ থেকে ২৫ বিঘা জমির ধান কাটতে পারব কিন্তু এখনো পাঁচ বিঘা জমির ধান কাটতে পারিনি। এক ঘণ্টা মেশিন চালু রাখলে পরবর্তী এক ঘণ্টা মেশিন বন্ধ রাখতে হয়। মেশিনটা দিয়ে কোনোভাবেই কাজ চালানো সম্ভব নয় বিধায় এটা নিয়ে উন্নতমানের মেশিন দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে উপজেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। মেটাল কোম্পানির ব্রাহ্মণবাড়িয়া রিজিওনাল ম্যানেজার আবদুর রশিদ জানান, মেকানিক্যাল জিনিস ডিস্টার্ব হতে পারে। এটা আমরা স্বীকার করি। আমরা তো অনেকগুলো মেশিন বিক্রি করেছি। কৃষক যে কথাগুলো বলেছে এর মধ্যে সত্যও আছে মিথ্যাও আছে। পুরোপুরি কাজ করে না, তা নয়। মেটাল প্রাইভেট লিমিটেড ১৯৮৩ সাল থেকে বিজনেস করছে। গত ২ থেকে ৩ বছর পূর্বে হার্ভেস্টার বাংলাদেশে এসেছে। অন্য কোম্পানির মেশিনও নষ্ট হয় বলে দাবি করেন তিনি।  আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহানা বেগম বলেন, মেটাল কোম্পানির হার্ভেস্টারগুলো ডিস্টার্ব দিচ্ছে বলে কৃষক আমাদের অফিসারদের কাছে অভিযোগ দিচ্ছে। ভবিষ্যতে এই ব্র্যান্ডের যন্ত্র কৃষকদের মাঝে না দেওয়া ভালো হবে।

সর্বশেষ খবর