রবিবার, ২৩ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন, দিশাহারা মানুষ

১০ বছরে বিলীন প্রায় ৪০ কিলোমিটার জনপদ ও বসতঘর

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন, দিশাহারা মানুষ

মেঘনাগর্ভে বিলীন হচ্ছে একের পর এক এলাকা। হাজার হাজার মানুষ গৃহহারা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে মেঘনার ভাঙনের মুখে উপজেলার বড়িকান্দি, ধরাভাঙ্গা, নুরজাহানপুর, মুক্তারামপুর, সোনাবালুয়া, মানিকনগর বাজার, চরলাপাং, কেদারখোলা, বাইশ মৌজা বাজারসহ নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর সীমানা মানচিত্র থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে উপজেলার মানচিত্র। এলাকার অধিকাংশ মানুষ ঘরবাড়ি, ফসলি জমিজমা, ব্যবসায়িক দোকানপাট হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছেন। নবীনগর উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনার প্রবল ভাঙনের খেলা চলছে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে। ভৈরব-নবীনগর-নরসিংদী নদীপথের প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গত ১০ বছরে মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা। প্রতি বছর শত শত কৃষিজমি, বাড়িঘর গ্রাস করছে সর্বনাশা মেঘনা। বাড়ছে উদ্বাস্তু ও ছিন্নমূলের সংখ্যাও। মেঘনার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে যাযাবর জীবনযাপন করছে অসংখ্য পরিবার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অব্যাহত এ ভাঙনের ফলে আগামী কয়েক বছরে নবীনগর উপজেলার আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারসহ কয়েকটি গ্রাম মেঘনাগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে বড়িকান্দি, ধরাভাঙ্গা, নুরজাহানপুর, মুক্তারামপুর, সোনাবালুয়া, মানিকনগর বাজার, চরলাপাং, কেদারখোলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এ ভাঙনের ভয়াবহতা চরম আকার ধারণ করে। তখন দেখা যায় নদীর ভয়ংকর ঢেউ আর মাটি ভাঙার শব্দে দিশাহারা হয়ে ছোটাছুটি করে মেঘনা পাড়ের মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী ভাঙনরোধকল্পে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে বড়িকান্দি নূরজাহানপুর, সোনাবালুয়া ও ধরাভাঙ্গা গ্রামের নদীভাঙন এলাকায় কাজ চলছে ধীর গতিতে। পানির নিচে সাগর চুরির মতো ঘটনা ঘটছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। মেঘনার ভাঙন রোধকল্পে ২০২০ সালে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের ধীর গতির কারণে অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।  স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুর রহমান জানান, ছোট বেলায় এক মাইল দূরে গিয়ে গোসল করেছি। আর এখন মেঘনার ভাঙনের কারণে আমাদের ঘরের কাছে নদী এসে গেছে। শত শত একর কৃষিজমি, বাড়িঘর, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কবরস্থান ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নুরজাহানপুর গ্রামের বাসিন্দা ও জনশক্তি রপ্তানির সাবেক মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, মরণের আগে যদি ভাঙন প্রতিরোধের বাঁধটা দেখে যেতে পারতাম, তা হলে মরেও শান্তি পেতাম। বড়িকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ হারুত বলেন, এভাবে মেঘনার ভাঙন অব্যাহত থাকলে একদিন উপজেলার সম্পূর্ণ মানচিত্রই পাল্টে যাবে।

সর্বশেষ খবর