রবিবার, ২৩ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

আপত্তিকর ভিডিও ধারণ নিয়ে সায়মন খুন

বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি

আপত্তিকর ভিডিও ধারণ নিয়ে সায়মন খুন

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে ‘ফুর্তি’ করতে একটি বাসায় যান ইমরান আহমদ সায়মন (২৪)। ওই বাসার জনৈক নারীর কাছে যাতায়াত ছিল তাদের। সায়মন ভিতরে প্রবেশ করলে গেটে অবস্থান নেয় তার তিন বন্ধু। এ সময় মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করে গেট অতিক্রম করে পরিচিত এক যুবক। ভিতরেও যায় সে। বিষয়টি জানতে পেরে বেরিয়ে আসে সায়মন। নিজের কোমরের বেল্ট টেনে টেনে, ভিডিও ধারণের কারণ জানতে চেয়ে চড়াও হয় ওই যুবকের ওপর। তখনো০ ভিডিও করছিল ওই যুবক। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে এক পর্যায়ে সায়মনকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ওই যুবক ও তার এক সহযোগী। ঘটনার সময় ধারণ করা দুটি ভিডিওচিত্র থেকে সম্প্রতি জানা গেছে এসব তথ্য। ঘটনার পর সায়মনের বন্ধুরা বিষয়টিকে আড়াল করে ছিনতাইয়ের নাটক সাজায়। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি কারও। ওই দিনই তিন বন্ধুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে একে একে খুনিসহ পাকড়াও করা হয় আরও দুজনকে। উদ্ধার করা হয় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরিও। ঘটনাটি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার। গত ২০ মার্চ রাতে উপজেলা পরিষদ সড়কে খুন হন সায়মন। এ ঘটনায় সায়মনের বড় ভাই ময়নুল ইসলাম সুমন বাদী হয়ে একই গ্রামের এনাম উদ্দিন (২৩), তাহিদ আলী (২৪), আফজাল হোসেন লায়েক (১৯), ফয়েজ আহমদ (২৪) ও তারেক আহমদ (২১)-কে আসামি করে মামলা করেন। এ ঘটনা সংশ্লিষ্ট দুটি ভিডিওচিত্র পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ সড়কের উস্তার আলীর বাসায় ভাড়া থেকে তার সহায়তায় সুমি নামের জনৈক নারী অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। ওই বাসায় যাতায়াত ছিল সায়মন ও এ ঘটনায় জড়িত সবার। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সায়মন বাসায় গেলে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তার বন্ধু ফয়েজ, লায়েক ও তারেক। এ সময় মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে প্রবেশ করে খুনি এমান উদ্দিন ও তার সহযোগী তাহিদ আলী। খবর পেয়ে বাইরে এসে ভিডিও ধারণ নিয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়া হয় তার। এক পর্যায়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় এনাম ও তাহিদ। পরে সায়মনের তিন বন্ধু এটিকে ছিনতাইয়ে রূপ দিয়ে নিজেদের রক্ষার অপচেষ্টা চালায়। পারস্পরিক কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিক তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

এরপর খুনিসহ অন্য আসামিরা ধরা পড়লে বেরিয়ে আসে খুনের প্রকৃত রহস্য। খুনি এনামের মোবাইল থেকে উদ্ধার করা হয় ৫১ সেকেন্ডের একটি ও ১ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিওচিত্র। ভিডিও থেকে হত্যাকান্ডের সময় ও ঘটনা সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ। সম্প্রতি এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় আত্মগোপনে থাকা বাসার কেয়ারটেকার উস্তার আলীকেও। সে জানাইয়া গ্রামের মৃত মনা উল্লাহর ছেলে। এর আগে জানাইয়া গ্রামের নূপুর নামে এক নারীকে আটক করলেও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয় পুলিশ। স্থানীয় সূত্র জানায়, উস্তার আলী, জনৈক সুমি ও নূপুর নামের দুই নারী মিলে ওই এলাকায় অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। তারা এলাকার যুব সমাজকে বিপৎগামী করছিল। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। খুনি এনাম উদ্দিন গংরা অপকর্মের ভিডিওচিত্র ধারণ করে মানুষকে জিম্মি করে উৎকোচ আদায় করত। সায়মনের বেলায় এমনটি করতে চাইলে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। বিশ্বনাথ পুলিশ স্টেশনের অফিসার ইনচার্জ গাজী আতাউর রহমান বলেন, প্রধান আসামিসহ মামলায় অভিযুক্তদের ইতিপূর্বে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর