সোমবার, ২৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

আখাউড়ায় ভুট্টার বাম্পার ফলন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

আখাউড়ায় ভুট্টার বাম্পার ফলন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। সহজ চাষ পদ্ধতি, কম সেচ, কম খরচে বেশি মুনাফা অর্জন ও বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভুট্টা চাষ। বর্তমানে ভুট্টার সংগ্রহে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় বাজারে ভুট্টার ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার আমোদাবাদ, লামারবাড়ি, আদমপুর, নিলাখাত, জয়পুর, ইটনা, রানীখার ধরখার, রুটিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ভুট্টার চাষ হয়েছে। গ্রামগুলোর চারদিকে সারি সারি হয়ে গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে। কিছু সবুজ আবার কিছু বাদামি রঙের। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। গাছে ঝুলছে হলুদ রঙের ভুট্টার  মোচা। ইতিমধ্যে চলছে গাছ থেকে মোচা কেটে  নেওয়ার কাজ। কৃষকেরা মাঠ থেকে ভুট্টা কেটে বাড়িতে নিয়ে আসছেন। কেউ বা সেগুলো মাড়াইয়ের কাজ করছেন। সবমিলিয়ে এ উপজেলার কৃষকরা ভুট্টা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি কর্মকর্তারা ভুট্টার উপকারিতা সম্পর্কে বলেন, ভুট্টার রয়েছে প্রচুর আয়রন। যা রক্তের লোহিত কণার প্রয়োজনীয় খনিজের চাহিদা পূরণ করে। উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখে। ভুট্টায় থাকা ফাইটোকেমিক্যাল শরীরে ইন্সুলিনের শোষণ ও নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে।  উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। সরকার এ চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করতে কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ ও সার প্রদান করেন। দিন দিন বাড়ছে এ চাষের আবাদ। তাছাড়া রোগ-বালাই এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে ভুট্টা চাষের আবাদ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন বলে এখানকার কৃষকরা জানান। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই এলাকায় কৃষকরা দিন দিন এখন ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ভুট্টা সাধারণত সিদ্ধ ও পুড়িয়ে খাওয়া যায়। এ ছাড়া ভুট্টার পাতা  গো-খাদ্য হিসেবে, মোচা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কৃষি সংশ্লিষ্টদের মতে, সাধারণত বেলে ও ভারি এটেল মাটি ছাড়া অন্য সব মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত উর্বর বেলে  দো-আঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট। উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের নিলাখাত গ্রামের  শেখ নিজাম বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি মাছ চাষ, সবজি চাষসহ বিভিন্ন ফল ফলাদি চাষ করে আসছেন।  এ বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে বাড়ি সংলগ্ন ৩০ শতক জায়গায় ধানের পরিবর্তে এই প্রথম ভুট্টা আবাদ করেছেন। এ চাষে বীজ ও সার বিনা মূল্যে সরকার থেকে পেয়েছেন বলে জানায়। এ ছাড়া  পানি, জমি প্রস্তুত, লাগানো, শ্রমিক মজুরি, কাটা-মাড়াইসহ সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে তার জমিতে ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে গড়ে ২০-২২ মণ। এই জমিতে যদি ধান চাষ করা হতো তাহলে ৭-৮ হাজার টাকার বেশি ধান পাওয়া যেত না। স্থানীয় বাজারে প্রতিমণ শুকনো বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকায়। ভুট্টা আবাদে খরচ বাদে অন্তত ১৪ হাজার টাকা তার আয় হবে। কৃষক লোকমান মিয়া বলেন, গত ২ বছর ধরে তিনি ভুট্টা চাষ করছেন। গত বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন হয়েছে। ভুট্টা চাষের জন্য তিনি সময়মতো সার বীজ কৃষি অফিস থেকে পেয়েছেন বলে জানায়। কৃষক আলফু মিয়া বলেন, তাঁর ৬ বিঘা চাষযোগ্য জমি আছে। এর মধ্যে ৩ বিঘা জমিতেই ভুট্টা চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভুট্টার ভালো ফলন হয়েছে বলে জানায়। আখাউড়া  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম  বলেন, ভুট্টা চাষ করতে আগ্রহী কৃষকদের মাঝে উন্নতমানের ভুট্টার বিজ ও সার বিনামূল্যে দেওয়া হয়। গত বছরের চেয়ে এবার ভুট্টা চাষাবাদ কিছুটা বেশি লাভজনক হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সর্বশেষ খবর