শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

নওগাঁয় লকডাউনে আমের বাজারে ধস

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁয় লকডাউনে আমের বাজারে ধস

আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে প্রসিদ্ধ জেলার মর্যাদা পেয়েছে নওগাঁ জেলা। এখানকার আম উৎপাদনকারীরা বছরের প্রথম থেকেই বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন। এরপর করোনা পরিস্থিতিতে যানবাহনের অভাবে পাইকারি ক্রেতার সংখ্যা তুলনামুলক কম থাকায় আম বাজারজাতকরণ নিয়েও যথেষ্ট চিন্তিত ছিলেন তারা। মে মাসের শেষে আম পাড়ার মৌসুম শুরু হওয়ার আগে আমের বাজারজাতকরণে সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপে তারা আবার আশাবাদী হয়ে উঠছিলেন। শুরুতে বাজারে আমের দাম যখন আমচাষিদের মনে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছিল, ঠিক তখন গত ১ জুলাই থেকে সারা দেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। ফলে নওগাঁর সাপাহারে আমের বাজারে তার প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে বাজারে ব্যাপারীরা আম কেনা এক রকম বন্ধ করে দেন। আমচাষিরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। নওগাঁ জেলার সবচেয়ে বড় আমবাজার সাপাহার উপজেলায় একই অবস্থা বিরাজ করছে। ঘোষণা মতে, কঠোর লকডাউনের কারণে গতকাল লকডাউনের দ্বিতীয় দিন থেকেই আম কিনছেন না পাইকারি ব্যবসায়ীরা। বাজারে নিয়ে আসা আম নিয়ে দারুণ বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। আম বিক্রেতা ও আমচাষিদের বক্তব্য- কঠোর লকডাউন ঘোষণার কারণে বাজারে ক্রেতা নেই। আর সে কারণে আম বিক্রি হচ্ছে না। পাইকাররাও বাইরের জেলা থেকে আসতে ভয় পাচ্ছেন। লকডাউনের মধ্যে তাদের কেনা আম বিক্রি করার কোনো জায়গা থাকবে কি না সে চিন্তা মাথায় রেখে তারা প্রায় আম কেনা ছেড়ে দিয়ে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। কঠোর এই লকডাউনের কারণে যদি আম উৎপাদনকারীরা আম বিক্রি ও ন্যায্যমূল্য না পান তাহলে চলতি মৌসুমে আম নিয়ে তাদের শেষ আশাটুকুও ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। গত শনিবার ও রবিবার সকাল থেকে অসংখ্য আম বিক্রেতাদের সারি সারি আমের লাইন নিয়ে বিকাল পর্যন্ত বসে থাকতে দেখা গেছে এবং সামান্য যে কয়েক মণ আম বিক্রি হতে দেখা গেছে তাও গত কয়েক দিনের বাজার দরের অর্ধেকের চেয়েও কম। কদিন আগেই সাপাহারে যে আম বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬শ টাকা মণ দরে, সেখানে শনিবার ও রবিবারে সে মানের আম বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বলে অসংখ্য আম বিক্রেতাগণ জানিয়েছেন। অসহায় আমচাষিদের বক্তব্য, করোনাকে কেন্দ্র করে বাজারে হয়তো একশ্রেণির আম ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরির পাঁয়তারা করতে পারেন। ভবিষ্যতে কোনো ব্যবসায়ী কিংবা ব্যক্তি গোষ্ঠী যাতে আম নিয়ে কোনো সিন্ডিকেট তৈরি করতে না পারেন সেজন্য তারা সর্বক্ষণ প্রশাসনের তদারকি এবং নজরদারি কামনা করেছেন। আড়তের মালিকগণ বলছেন, লকডাউনে ব্যাপারীদের কেনা আম তারা বাইরে বিক্রি করতে পারবেন কি না চিন্ত করে আম কিনছেন না। ব্যাপারীগণ যদি আম ক্রয় না করেন তাহলে আমাদের করণীয় কী? সব মিলিয়ে নওগাঁর সাপাহারের আমচাষিগণ তাদের কষ্টার্জিত উৎপাদিত আম নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

সর্বশেষ খবর