রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

আমতলীতে হাজার হাজার শ্রমজীবীর কাজ নেই

পরিসখ্যান ব্যুরো কর্মকর্তার তথ্য মতে, উপজেলায় ২৫.০৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি

আমতলীতে হাজার হাজার শ্রমজীবীর কাজ নেই

কাজের অপেক্ষায় শ্রমজীবী মানুষ। বরগুনার আমতলী থেকে তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে আমতলী উপজেলায় ৫১ হাজার ৪৪৬ শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। দ্রুত সরকারিভাবে এদের সাহায্যের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে গত ১ জুলাই থেকে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ওই বিধি নিষেধে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার ঘোষিত লকডাউনের দশম দিন চলছে। সরকারের নির্দেশিত লকডাউন মানতে গিয়ে উপজেলার হতদরিদ্র, দরিদ্র, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, মোটরসাইকেল চালক, দিনমজুরসহ শ্রমজীবী ৫১ হাজার ৪৪৬ জন মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কর্মহীন হয়ে পড়ায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।  আমতলী উপজেলা পরিসংখ্যান ব্যুরো অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা জনসংখ্যা ২ লাখ ৫ হাজার ২১০ জন। এর মধ্যে উপজেলার ২৫.০৭ % মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। ওই হিসাবে উপজেলায় ৫১ হাজার ৪৪৬ জন মানুষ হতদরিদ্র শ্রমজীবী। তারা দিন আনে দিন খায়। কাজ না জুটলে তাদের খাবার জুটে না। লকডাউনের কারণে এদের অধিকাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। দ্রুত এ সব শ্রমজীবী অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।  গতকাল আমতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা প্রশাসন, নৌবাহিনী পুলিশ কঠোরভাবেই লকডাউন পালনে কাজ করছে। সড়কে চলছে না যানবাহন। তারপর প্রশাসনের নজর এগিয়ে পরিবার পরিজনের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করছে। কিন্তু সড়কে কোনো বড় ধরনের যানবাহন চলাচল করছে না। শ্রমজীবী আল আমিন, শামিম ও জাকির বলেন, ‘লকডাউনের পর থেকে কোনো কাজ নেই। পোলাপান লইয়্যা খুব কষ্টে হরি। ঘরে য্যা ছিল হ্যা খাওয়া শ্যাষ। এ্যাহন গুড়াগাড়া লইয়্যা কি খামু হেইয়্যা কইতে পারি না।’ অটোচালক বাবুল বলেন, কোনো মতে ফ্যান পানি খাইয়্যা গুড়াগাড়া লইয়্যা বাইচ্চা আছি। কাউনিয়া গ্রামের শ্রমজীবী কামাল বলেন, কোনো কাজ নেই। লকডাউনে বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাচ্ছি। কিন্তু পেটতো অলস না। সেতো যথাসময়ে খাবার চায়। কি হরবো ভেবে পাচ্ছি না।  আমতলী বেসরকারি সংস্থা নজরুল স্মৃতি সংসদের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মো. শাহাবুদ্দিন পান্না বলেন, লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোকে সরকারি, বেসরকারি ও বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে লকডাউনে কর্মহীন মানুষের কাজের জন্য নির্ধারিত সময় দেওয়া প্রয়োজন। যাতে তারা উপার্জন করে পরিবার পরিজনের ভরণ পোষণ চালাতে পারে। নইলে কর্মহীন মানুষগুলো অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করতে হবে। আমতলী উপজেলা পরিসখ্যান ব্যুরো অফিসার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, উপজেলায় ২৫.০৭% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে ওই মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, উপজেলার শ্রমজীবী ও অসহায় মানুষকে সহায়তায় বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। সহায়তার এখনো বরাদ্দ পাইনি। বরাদ্দ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর