কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার উঠানে উঠানে এখন আতপ চালের গুঁড়ো (স্থানীয় ভাষায় চালের গুঁড়ি) শুকানোর উৎসব চলছে। ঈদুল আজহার দিন রুটি বানানোর জন্য এই চালের গুঁড়ো প্রস্তুত করা হচ্ছে। কোথাও বাড়িতে এসে ধান ও চাল ভাঙিয়ে দেয় ভ্রাম্যমাণ মিলের লোকজন। কোথাও বাজারে গিয়ে চাল ভাঙিয়ে আনতে হয়। বিভিন্ন উপজেলায় খবর নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লার বেশিরভাগ এলাকায় ঈদুল আজহার দিন রুটি বানানোর জন্য আতপ চালের গুঁড়ো প্রস্তুত করা। বাজারে ভাঙিয়ে আনলে খরচ কম পড়ে। বাড়িতে আসা মিলে ভাঙিয়ে নিলে বেশি খরচ দিতে হয়। ভাঙানোর পর চাল গুঁড়ো উঠানে বিছানার ওপর কাপড় দিয়ে শুকাতে হয়। না হয় গুঁড়ো নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি উঠানে এখন সাদা গুঁড়োর মেলা বসেছে। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মনপাল গ্রামের জমিলা খাতুন নামের একজন গৃহবধূ জানান, এই এলাকায় সবাই হয়তো পশু কোরবানি দিতে পারবেন না। তবে চালের গুঁড়ো প্রায় সব পরিবার প্রস্তুত করছে। কারণ কোরবানিদাতা পরিবার থেকে তারা মাংস পাবেন। এসব এলাকায় চালের রুটি ছাড়া কোরাবানির ঈদ যেন অসম্পন্ন মনে করা হয়। শত বছর ধরে এই সংস্কৃতি চলে আসছে। এই এলাকায় বাড়িতে এসে মেশিনে ধান ও চাল ভাঙিয়ে দেন আবদুল কুদ্দুস। তিনি জানান, এখন প্রতি বাড়িতে চাল ভাঙার উৎসব চলছে। তবে গত দুই বছর ধরে মানুষ চাল কম ভাঙাচ্ছে। আগে যেখানে প্রতি বাড়িতে ৫ হাজার টাকার মতো কাজ হতো সেখানে ৩ হাজার টাকার কাজও হচ্ছে না। বাজারে বিদ্যুৎ দিয়ে মেশিন চালানো হয়। আমরা ডিজেল দিয়ে মিল চালাই। আবার পথ খরচ আছে। তাই বাজারে যে ধান ভাঙাতে মণ প্রতি ৬০ টাকা লাগে সেখানে আমাদের ১০০ টাকা নিতে হচ্ছে। এছাড়া যে চাল প্রতি কেজি গুঁড়ো করতে বাজারে ৫ টাকা সেখানে আমরা ৭ টাকা করে নিচ্ছি।
জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা তারিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা অঞ্চলে কাজ করছি। এখানে ঈদুল আজহার দিন রুটি বানানোর জন্য আতপ চালের গুঁড়ো প্রস্তুত করা হয়। তবে সব জেলায় এই সংস্কৃতি নেই। বিশেষ করে আমার নিজ জেলা নরসিংদীতেও এমনটা দেখিনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে চালের গুঁড়ো প্রস্তুত করা বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি। সাধারণ স্থানীয় জাতের ধান থেকে এই চাল ও গুঁড়ো করা হয়।